বানারীপাড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার ও রাজিয়া দম্পতির তৃতীয় কন্যা অদম্য মেধাবী সাদিয়া আফরিন হারিছা । এমবিবিএস (শিক্ষাবর্ষ ২০২১-২২) ভর্তি পরীক্ষায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। এতে শুধু তার পরিবারেই নয়, তার পুরনো বিদ্যাপীঠ জাতীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কারপ্রাপ্ত বানারীপাড়া বন্দর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষকবৃন্দ এবং সহপাঠীসহ গোটা এলাকাবাসী উচ্ছ্বসিত ও আনন্দে উদ্বেলিত।
হারিছা ২০১৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে দেশের মধ্যে প্রথম ও ২০১৮ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক গল্প বলায় প্রথম (রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গোল্ড মেডেল) স্থান অর্জন করে দেশজুড়ে আলোচিত ও প্রশংসিত হন।
এ ছাড়াও ২০১৭ সালে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক উপস্থিত বক্তৃতায় জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয়, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বরিশাল বিভাগীয় পর্যায়ে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় এবং বিএফএফ সমকাল বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসব এবং রচনা প্রতিযোগিতায় বরিশাল বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব ও ২০১৮ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। হারিছা একাধিক বিষয়ে বিভাগীয় ও জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে ইতিমধ্যে বরিশাল ও বানারীপাড়াকে আলোকিত ও গৌরবান্বিত করেছেন।
হারিছা পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী, অষ্টম শ্রেণির জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির সকল পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ইসলামিক জ্ঞানও অর্জন করেছেন। শিক্ষার প্রতিটি স্তর সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে তাকে দারিদ্র্যের সঙ্গে নিত্য লড়াই করতে হয়েছে। তিন বেলা ঠিকমতো খেতে, প্রাইভেট ও ভালো পোশাক পরতে না পারলেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি,ত্যাগের মনোভাব, নিরলস অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রম তার জীবনে একের পর এক সাফল্য এনে দিয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি একজন মানবিক চিকিৎসক হয়ে মানবসেবায় ব্রত হওয়ার পাশাপাশি দরিদ্র পিতা-মাতার সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে চান।
এ প্রসঙ্গে গরিবের জীর্ণ কুটিরে চাঁদের আলো হওয়া সাদিয়া আফরিন হারিছা বলেন, তিনি যখন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তখন তার মা গর্ভপাতজনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে বরিশাল হাসপাতালে ভর্তি হন। এক পর্যায়ে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা ছাড়াই তার মাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। সেই থেকে ধুঁকে ধুঁকে তার মা কোনোমতে বেঁচে আছেন। তার শিশুমনে তখন এ বিষয়টি গভীরভাবে নাড়া দেয়। অসুস্থ মায়ের জন্য দু’চোখে কান্নার সাঁতার নিয়ে হারিছা তখনই সংকল্প করেন তিনি একদিন চিকিৎসক হয়ে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন। কারো মাকে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পেতে দেবেন না।
মহান আল্লাহর কৃপায় তার সেই স্বপ্ন পূরণের পথে। তিনিসহ তার চার বোনের লেখাপড়া ও ছয় সদস্যের পরিবারের ভরণ-পোষণে রিকশা শ্রমিক বাবার রক্ত পানি করা ঘাম জড়ানো কষ্টার্জিত উপাজর্নের কথা স্মরণ করে অশ্রুসজল হয়ে পড়া হারিছার ঐকান্তিক বিশ্বাস, তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি, নিরলস অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের পাশে মহান সষ্ট্রা আছেন। তিনি তার স্বপ্ন পূরণের জন্য সবার দোয়া ও সহায়তা কামনা করেছেন।
হারিছার পিতা মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার পরিবার চালান ব্যাটারী চালিত রিস্কা চালিয়ে। তার মেয়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।