উপমহাদেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক , সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক সানাউল্লাহ নূরী। ১৯২৮ সালের ২৮ মে সানাউল্লাহ নূরী তৎকালীন নোয়াখালী বর্তমান লক্ষীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর ফলকন গ্রমে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাড়ীর পাশেই অ্যাংলো -অ্যারাবিক মাদ্রাসা থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চতর নিউ স্কিম মাদরাসায় ভর্তি হন। পরে তিনি নেত্রকোনা জেলা শহরের আঞ্জুমান হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। ভাষা আন্দোলন ও তমদ্দুন মজলিসের কাজে সার্বক্ষণিক জড়িয়ে পড়ায় লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে। পরে বিএ পাস করেন। সানাউল্লাহ নূরী ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য ও সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়েই ওয়ার্ডসওয়ার্থের ‘লুসি গ্রে’ এবং কিটসের ‘ফায়ারিং সং’ কবিতা অনুবাদ করেন। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় আন্ধার মানিকের রাজকন্যা উপন্যাস লিখে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে সাপ্তাহিক ‘ইনসান’ পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক হওয়ার মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতার জগতে পা রাখেন। ১৯৪৮ সালে দৈনিক আজাদ-এর বার্তা বিভাগে যোগদান করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন সময় তমদ্দুন মজলিসের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক, মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক ইত্তেফাক এবং দৈনিক মিল্লাত, মাহে নও, মাসিক সওগাত ও দৈনিক নাজাতে কাজ করেছেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সিলভার বার্ড নামে মার্কিন প্রকাশনা সংস্থার ঢাকা শাখার পাঠ্যপুস্তক বিভাগের খণ্ডকালীন সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশনের ঢাকা শাখার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৪ সালে দৈনিক পাকিস্তানের জন্মলগ্নে তিনি এর সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৭৯ পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। জনাব নূরী ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দৈনিক দেশ, দৈনিক জনতা এবং দৈনিক দিনকালের সম্পাদক অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।সানাউল্লাহ নূরী ছিলেন নিরলস, দক্ষ ও নির্ভীক কলমসৈনিক। চল্লিশের দশক থেকে শুরু করে আমৃত্যু সাহিত্য ও সাংবাদিকতার জগতে কাজ করেছেন। তার লিখিত গ্রন্থগুলো দেশের সুধী মহলে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। সানাউল্লাহ নূরী ছিলেন একাধারে সম্পাদক, ঔপন্যাসিক, কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, ইতিহাসবিদ, সংগঠক ও কলামিস্ট। তাঁর রচনা ও প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে ৮টি উপন্যাস , ৭টি গল্প ও শিশু তোষ গ্রন্থ , ৩টি ভ্রমণ কাহিনী , সাংবাদিকতা বিষয়ে ২টি গ্রন্থ, রাজনৈতিক বিষয়ে ২টি গ্রন্থ এবং কব্যগ্রন্থসহ সর্বমোট ৬০টি গ্রন্থ। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা- আন্দার মানিকের রাজকন্যা, নিঝুম দ্বীপের উপাখ্যান, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতা, নোয়াখালী-ভুলুয়ার ইতিহাস ও সভ্যতা, উপমহাদেশের শতবর্ষের স্বাধীনতার যুদ্ধ। ১৯৮৮ সালে তিনি ‘বাংলাদেশ কাউন্সিল অব এডিটরস’ গঠন করেন। জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসরের সভাপতি ছিলেন ১৯৭৭ থেকে আমৃত্যু। তিনি বিভিন্ন সময় ৬০টির মতো দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। ১৯৮২ সালে সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য তাকে একুশে পদক দেয়া হয়। ২০০১ সালের ১৫ জুন ইন্তেকাল করেন প্রথিতযশা এ কলম সৈনিক।