ভ্যানচালক বাবার ছেলে ঢাবিতে, মেয়ে মেডিকেলে

ঠাকুরগাঁওয়ের বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বেলসাড়া গ্রামের বাসিন্দা আফতাবর রহমান। স্ত্রী, এক ছেলে, তিন মেয়ে আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সাত সদস্যদের সংসারের আয়ের উৎস ভ্যানগাড়ি। নিজস্ব জমি জমা নেই বলে শুধু ভ্যান চালিয়ে ৩ সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্নে এগিয়ে চলেছেন তিনি।  ভ্যানগাড়ি চালিয়ে যা আয় করতেন তা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানের পড়াশোনার খরচও চালাতে হতো।

এই ভ্যান চালানো উপার্জনে ছেলে মুন্নাকে ভর্তি করিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুখবর হলো, দ্বিতীয় মেয়ে আলপনা আক্তার এবার মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। ছোট মেয়ে এইচএসসিতে পড়াশোনা করছে।
ভ্যানচালক বাবাসন্তানদের এমন সফলতায় পরিবারসহ সর্বত্র আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন ভ্যান চালক আফতাবর।

মেডিকেলে চান্স পাওয়া আলপনা আক্তার বলেন, ‘আমার এই সফলতায় মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। যার অনুপ্রেরণায় আমার এ সফলতা তিনি হলেন আমার বাবা। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে রোজগার করেন, পরিবার চালান। আর আমাকে স্বপ্ন দেখাতেন ডাক্তার হওয়ার। বাবার পাশাপাশি আমার মা ও অনেক পরিশ্রম করেছেন। আমার কেমন ফলাফল হবে-এটা আমার চেয়ে আমার মা আগেই বলে দিতে পারতেন। ’

তিনি আরো বলেন, আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ আমাকে অনেকভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমি প্রথমে মানবিক শাখায় ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্যালয়ের স্যাররা বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। সেখান থেকে আমার স্বপ্নটি আরও বেগবান হয়। যদিও আমাদের মত পরিবারের ছেলে মেয়েরা স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই। তবে আমি মনে করি দারিদ্র্যতা সফলতার অন্তরায় নয়; পরিশ্রম করলে সফল হওয়া সম্ভব।

আলপনার ভ্যানচালক বাবা আফতাবর রহমান বলেন, ’টাকার অভাবে বড় মেয়েকে পড়াতে পারিনি। পরে স্বপ্ন দেখেছি, বাকি সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করবো। একদিন আমি ভ্যান চালিয়ে রাতে বাসায় আসলাম। খাওয়ার সময় ছেলেটা বললো, বাবা দোয়া করিও আমি যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ! সে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছে। সেভাবে আমার মেয়েকেও আমি কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছি। আমি সারাদিন ভ্যান চালিয়ে কষ্ট করতাম শুধুমাত্র তাদের জন্য। আমার ২৫ শতক আবাদি জমি ছিল। ছেলেকে ভর্তি করার জন্য ৫ শতক জমি বিক্রি করতে হয়। পরে ছেলে ও মেয়েকে পড়াশোনা করানোর জন্য বাকি ২০ শতক জমিও বিক্রি করতে হয়। এখন ভ্যান আর ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই আমার। তারপরও আজকে আমি অনেক খুশি। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ’

তিনি আরও বলেন, ডাক্তারি পড়ানো অনেক খরচ। আমি চেষ্টা করবো আমার সাধ্যমত। তবে যদি সরকার বা অন্য কোন পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয় তাহলে আমার কষ্টটা কম হবে।

বালীয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, আলপনার বাবা চাইলে উপজেলা প্রশাসন থেকে তার পড়াশোনার বিষয়ে সহযোগীতা করা হবে।

আরো কিছু পোস্টঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *