মাহবুব সৈকত ঃ
আব্বার শেষ দিন গুলো । । ।
দেখতে দেখতে কেটেগেল দুই মাস অর্থাৎ ৬০ দিন, আব্বা আমাদের চোখের আরালে। আইসিইউতে থাকা দুই দিন যোগ করলে ৬২ দিন আগেও তিনি ছিলেন।
তার ৩ দিন আগে ১৬ এপ্রিলের এই ছবি এখন কেবলই ছবি। আব্বার সাথে আমরা ৫ ভাই বোন আর মা, হাস্পাতালের কেবিনে, ডাক্তারের কথা অনুযায়ী সফল ওপারেশনের পর হাসি মুখে তার পাশে। ১৪ এপ্রিল ১ লা বৈশাখ ছোট ভাইয়ের আনা ইলিশ দিয়ে আমার বাসায় বসে জীবনের শেষ ভাত খেলেন, ১৫ এপ্রিল অপারেশন, সবাই চিন্তায় ছিলাম বয়সের কারনে অপারেশন টেবিলে কোন সমস্যা হওয়া নিয়ে।ভালোয় ভালোয় শেষ, সার্জন ছিলেন প্রফেসর মুহিবুল আজিজ, দেখার আগেই থিয়েটারে ডেকে নিয়ে টিম চার্জের টাকাটাও নিয়ে নিলেন তার সহযোগী ডা হাবিব, ৫ হাজার বাকি ছিলো পরে তাগাদা দিয়ে তাও নিয়ে ছিলেন, প্রতিবার দেখে যাওয়ার জন্যে আলাদা ফি তো আছেই। যাই হোক অপারেশন শেষে ঞ্জান ফিরলো কিছক্ষনের মধেই, কেবিনেও দিল, সবার সাথে ভালো ভাবেই কথা বললেন আব্বা।১৬ তারিখ ছিল আমার জন্ম দিন, অফিস শেষ করে সোজা হাস্পাতালে, ভাবলাম এটা হয়তো জীবনের স্রেষ্ট জন্মদিন আমার, বাবা ভালো হয়ে ফিরছেন, আব্বার অবস্তা ভালো তাই বোন দুলা ভাইদের বিদায় দিলেন তিনি।বড় ভাইয়া আর মা সব সময় আব্বার কাছে, আমি অফিস শেষ করে সন্ধ্যা থেকে রাত ১০/১১ টা, ছোট ভাই দিনে অফিস রাতে হাস্পাতালে, বাসায় বউ অসুস্থ থাকায় সবাই আমাকে রাতে বাসায় পাঠিয়ে দিত। যাই হোক, এরই মধ্যে ডাক্তার কিছুটা জটিলতার কথা বললেন, তবে তেমন ভাবে না। তার উপরই আস্থা রেখে ছিলাম।আমরা নিজেরা অন্য কোন ডাক্তার কল করিনি, যদিও আমি আমার দুই সহকর্মী – সহযোদ্ধা ঘনিষ্ট (!!) ডাক্তারকে আসার জন্যে অনুরোধ করেছিলা্ম পরামর্শের জন্যে, ১ জন এসেছিলেন যখন তখন সব কিছু শেষ, আর অন্য জন আসারই সুযোগ পাননি। যাই হোক সার্জারির ক্ষত শুকিয়ে যাওয়ায় আমরা ভালো মুডেই ছিলাম। এক্টাই সমস্যা তা হলো বায়ু পাস হচ্ছিলো না , ৩ বছর আগে এই সার্জনই আব্বার সিএ রেক্টম অরারেশন করে মলদার স্টাপরার করে দিয়ে ব্যাগ লাগিয়ে দিয়ে ছিলেন নাভির ডান পাশে, এই সময়ে তার কস্ট হলেও অভস্ত হয়ে গিয়ে ছিলেন। বরিশালেই ছিলেন ডিসেম্বরে ডাকায় নিয়ে এসেছিলাম। শারীরিক ফিটনেস ভালোই ছিলো, অনেক গুলো পরিক্ষা করার পর তার প্রমানও মিল্লো। তার পরই অপারেশন। ১৯ তারিখ অফিস থেকে গিয়ে দেখলাম ডা হাবিব নার্সদের নিয়ে আব্বার নাক দিয়ে প্রথমে মোটা তার পর চিকন পাইপ ভরার চেস্টা করছেন, কিন্ত পারছেন না, আব্বা ব্যাথায় কোকালেই তাকে নানা পরামর্শ দিয়ে চুপ থাকতে বলছে, হাবিব সাহেব জানাল ভিতরে লিকুইট জমায় তা বের করার চেস্টা চলছে, না পেরে পাইপটা নাকে লাগিয়ে তারা চলে গেল, সময় তখন আসর নামাজের শেষ ওয়াক্ত। এতক্ষন পর বাবার সাতে কুশল্বিনিময় হল আমার, ভাইয়া বল্লো আব্বাকে আজ শরীর মোছানো হওয় নাই, আব্বা নিজেই বিছানা থেকে উঠলেন আমাদের সহায়তায়, ডাক্তার তাকে একটু মুভমেন্ট করতে বলেছেন, চেয়ারে বস্লেন বাব আমার, মুছিয়ে দিলাম , কিছু অংশ নিজেও মুছলেন, তাইয়ামুম করলেন, তার পর আসরের নামাজ পরলেন, আমি বললাম আবাবা রোগ মুক্তির জন্যে ২ রাকাত নফল নামাজ পরেন, তাও পরলেন, দোয়া করলেন, বললেন , আমাকে বিছনায় তুলে দে, জিঞ্জাস করলাম একটু বারান্দায় যাবেন কি না, বললেন না , এরপর নিজেই বেডে বসলেন, আমি পা তুলে দিলাম। শুয়ে পরলেন তিনি । , অনেক কস্টে মাকে বাসায় পাঠিয়ে ছিলাম সকালে তাকে নিয়ে আসার জন্য তখন মুন্না মানে ছোট ভাইও বাসায়, তাই কেবিনে পাশের বেডে আমি আর বড় ভাইয়া, আব্বা বললেন ঘাঢ়ে ব্যাথা হচ্ছে, আমি তার মাথার পাশে বসে হাত বুলাচ্ছিলাম আর দোয়া পরছি, আব্বাও পছেন, ঘারের কিছুটা ব্যাথা আব্বার অনেক দিনের, তাই আমরা বড় কিছু মনে করি নি, কিন্তু ২ মিনিট যেতে না যেতেই দেখলাম আব্বার চোখ উল্টাচ্ছেন, ভাইয়া তাকে ধরলেন আমি ডাক্তার কল করলাম, মুলত; এটাই বাবার চলে যাওয়া – মুক্তির জন্যে দোয়া আল্লাহ কবুল করলেন, পাক পবিত্র অবস্তায় চলে গেলেন প্রভুর সনিধ্যে। ( ইন্না … রাজেউন)এর পর তাকে নেয়া হলো আইসিইউতে, তখন মাগরীব।
(চলবে)