গ্রীষ্ম হোক কিংবা বর্ষা, শীত হোক অথবা হেমন্ত – বাড়ির সদস্য তালিকায় যদি শিশুদের উপস্থিতি থাকে তাহলে সব ঋতুতেই আবহাওয়া আর সময়ের মেজাজ বুঝে নিশ্চিত করতে হবে শিশুদের যত্ন। একথা হয়তো ঠিক যে ঋতুর পালাবদলের সাথে সাথে কমবেশি সবাইকেই কোনো না কোনো বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়। কিন্তু শিশুরা যেহেতু খাওয়া থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই বড়দের উপর নির্ভরশীল তাই যেকোনো ঋতুতেই শিশুদের যত্নে এগিয়ে আসতে হয় শিশুর বাবা-মা তথা অভিভাবকদের।
সাধারণত অন্যদের তুলনায় শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় বর্ষার এই স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় শিশুদের অসুখ-বিসুখের পরিমাণ অনেকাংশেই বেড়ে যায়। বর্ষার আবহাওয়ায় শিশুর যেসব সমস্য হয় তার মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় রোদ-বৃষ্টির খেয়ালিপনায় শিশুর নানারকম অস্বস্তির কথা। বর্ষাকালের এই রোদ, এই বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া যেমন কখনো গরম হয়ে ওঠে আবার কখনো সেখানে বিরাজ করে ঠান্ডা ভাব। শিশু যদি বৃষ্টিতে ভেজার বায়না ধরে তবে তাকে সেটি থেকে বিরত রাখতে হবে। এছাড়া স্কুল থেকে ফেরার পথে বা খেলতে গিয়ে শিশু কোনো কারণে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে বাড়িতে ফেরার সাথে সাথেই তার মাথা ও শরীর ভাল করে মুছিয়ে দিতে হবে। অন্যদিকে বৃষ্টিহীন বর্ষা দিনে যখন আবহাওয়া খানিকটা গরম হয়ে ওঠে তখন আদ্র আবহাওয়ায় শিশুর শরীরে যেন ঘাম বসে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রায়শই দেখা যায় যে, বর্ষার রাতে ঠান্ডা কিংবা গরমে শিশুর বুকে ঠান্ডা বসে যায়। কাজেই আপনার শিশুর মধ্যেও যদি এ জাতীয় সমস্যা দেখা দেয় তাহলে রাতে ঘুমানোর সময় তার বুকের ওপর হালকা কোনো কাপড় রাখতে হবে। সেই সাথে রাতে ঘুমের মাঝে শিশু অত্যধিক পরিমাণে ঘেমে যাচ্ছে কিনা সেটিও খেয়াল করতে হবে।
বর্ষার সময়টায় যাদের বাড়ির আশপাশে পানি জমে যায় তাদের বাড়িতে মশার উপদ্রব হতে পারে। এক্ষেত্রে দিনের বেলা কিংবা সন্ধ্যার সময় বিশেষ করে শিশুর ঘুমের সময়টিতে তাকে মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হবে। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপশি মশার ওষুধ ছিটিয়ে মশার উপদ্রব কমাতে হবে। এছাড়া যেসব শিশু স্কুলে যায় বা বাড়ির বাইরে নির্দিষ্ট একটি সময় খেলাধুলা করে তারা যেন বর্ষায় রাস্তার পাশে জমে থাকা অপরিচ্ছন্ন পানির সংস্পর্শে কোনো ধরনের চর্মরোগের শিকার না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
বর্ষার সময় শিশু যেসব পোশাক পরে সেগুলোর প্রতিও মা-বাবার খেয়াল রাখতে হবে। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় শিশুর পোশাকে যেন ‘ড্যাম’ ভাব চলে না আসে সে বিষয়ের প্রতি সচেতন হতে হবে। একই ভাবে শিশু যে বিছানায় ঘুমায় কিংবা যেখানে বসে পড়াশোনা করে সেসব জায়গাতেও যেন বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে ভাব না থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
অনেক মা-বাবাই ভাবেন যে, বর্ষার সময় শিশুকে প্রতিদিন গোসল করালে তার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তবে এটি একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। শিশুর সু-স্বাস্থ্যের জন্য শীত কিংবা বর্ষা সবসময়ই প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত পানিতে শিশুকে গোসল করানো উত্তম। এক্ষেত্রে শিশুর ঠান্ডার ভাব থাকলে হালকা গরম পানিতে যেকোনো জীবাণুনাশক যেমন স্যাভলন বা ডেটল মিশিয়ে শিশুকে গোসল করানো যেতে পারে। আর গোসলের পর শিশুর মাথা এবং শরীর অবশ্যই ভাল করে মুছিয়ে দিতে হবে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক