ওয়র্ক-ফ্রম-হোমের দাক্ষিণ্যে বিগত কয়েকমাসে একাধিকবার এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন কর্মরত অভিভাবকরা। সন্তানের দেখভাল, তার পড়াশোনার সঙ্গে কীভাবে ব্যালান্স করবেন নিজের ওয়র্ক শেডিউল? রইল পরামর্শ।
কোভিড-১৯-এর কারণে বিগত কয়েকমাসে ওয়র্ক-ফ্রম-হোম কালচারের সঙ্গে প্রায় সকলেই মানিয়ে নিয়েছেন। অফিসের কাজের সময় অনুযায়ী সংসারের অন্যান্য কাজের সময় এদিকওদিক করে নিলেও, সন্তানের পড়াশোনা, তার অনলাইন ক্লাস ইত্যাদির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন, বেশিরভাগ অভিভাবক। অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও কনফারেন্সের মাঝে ছেলেমেয়ের অনলাইন টেস্টের প্রিপারেশন বা প্রেজ়েন্টেশন বানানোর মাঝে ম্যাথস প্রবলেম সলভ করার ডাক পড়লে বিরক্ত হওয়া যেমন স্বাভাবিক, তেমনই কোনও দিকই উপেক্ষা করারও জো নেই! সন্তান একটু বড় হলে তাও তাকে বুঝিয়েসুঝিয়ে সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব। কিন্তু বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সত্যিই কঠিন। তবে কোনওদিকেই যখন গাফিলতি করার উপায় নেই, তখন বুদ্ধি করেই সমাধান বের করতে হবে। আগে থেকে সবটা ছকে নিলে সহজেই দু’দিক সামলাতে পারবেন।
- অফিসের সব কাজই তো নির্দিষ্ট সময়ে করার দরকার হয় না। যে কাজগুলো নিজের সময়মতো করতে পারবেন, সেগুলো আলাদা করে নিন প্রথমেই। ওয়র্কিং আওয়ার্স ফ্লেক্সিবল হলে ভাল। দু’টো কাজের ফাঁকে এক-আধঘণ্টা সময় সন্তানকে দিন। যে সময়টা আপনি কাজে ব্যস্ত থাকছেন, সেইসময় ওকেও কোনও একটা হোমওয়র্ক দিয়ে রাখুন। আপনি ফ্রি হলে ওর কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, তা দেখে নিন।
- স্বামী-স্ত্রী দু’জনে দায়িত্ব ভাগ করে নিন। হয়তো সকালে সন্তানের পড়াশোনা আপনি সামলালেন, সেক্ষেত্রে অপরজনকে বলুন সন্ধেবেলা বাচ্চাকে পড়াশোনায় সাহায্য করতে। যাঁদের নির্দিষ্ট শিফটে কাজ করতে হয়, তাঁদের ক্ষেত্রেও কাজ ভাগ করে নিলে সুবিধে হবে। বাচ্চা খুব ছোট হলে, তাকে কনস্ট্যান্ট মনিটর করা বা সর্বক্ষণ তাকে অ্যাটেনশন দেওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে দু’জনের ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এবং ডিনার টাইমও আলাদা করে নিন।
- যাঁরা সিঙ্গল পেরেন্ট বা একজন জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত বলে কারওর সঙ্গে সন্তানের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারছেন না, তাঁরা অনলাইন রিসোর্সের সাহায্য নিন। বাচ্চাকে বিভিন্ন লার্নিং এবং এডুকেশন অ্যাপের সাহায্য নিতে বলুন। এতে বাচ্চার প্রবলেম সলভিং এবিলিটিও তৈরি হবে, আর আপনিও আপনার কাজে মন দিতে পারবেন।
- বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকলে, চেষ্টা করুন বাচ্চা ঘুম থেকে ওঠার আগেই নিজের কাজ যতটা সম্ভব সেরে ফেলার। বিশেষত যে কাজগুলোয় মনঃসংযোগের প্রয়োজন, সেগুলো সকালে এক-দেড়ঘণ্টা আগে উঠে শান্ত মনে সেরে নিন।
- সপ্তাহের শুরুতেই আগামী সপ্তাহে সন্তানের স্কুলে কী কী গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট বা মিটিং রয়েছে, বা কোন সময়ে কোন ক্লাস রয়েছে, তার একটা তালিকা তৈরি করে নিন। স্বামী-স্ত্রীর অন্তত একজন সেই প্রয়োজনীয় সময়গুলোতে ফাঁকা থাকার চেষ্টা করুন। নিজেদের কাজের ফাঁকে কোন সময় সন্তানের পড়াশোনা ব্যালান্স করা সম্ভব, তা আগে থেকে ঠিক করা থাকলে সামলাতে অসুবিধে হবে না।
- আইডিয়ালি এই পরিস্থিতিতে প্রত্যেকের ওয়র্কস্টেশন আলাদা হলে ভাল। আপনি যে ল্যাপটপ বা ডেক্সটপে কাজ করছেন, তা সন্তানের পড়াশোনার কাজে না ব্যবহার করলেই ভাল। একান্তই তা সম্ভব না হলে, কিছু কাজ নিজের মোবাইলে সেরে নিন। তবে সেটারও একটা প্ল্যানিং থাকা জরুরি।
- বাচ্চার সব কাজেই যে আপনার সাহায্যের প্রয়োজন, তা তো নয়। তাই নিজে যে সময় অফিসের কাজ করবেন, সেইসময় বাচ্চাকে সেই কাজগুলোই করতে বলুন, যেগুলো ও একাই করতে পারবে।
- প্রয়োজনীয় সময়ে কল মিউট করে রাখতে পারেন, যাতে বাড়ির নয়েজ় কাজের জায়গায় না পৌঁছয়।
মনে রাখবেন, আপনি ক্রমাগত বাড়িতে বসে কাজ আর সংসার সামলে যেমন হাঁপিয়ে উঠেছেন, সন্তানের মনের অবস্থাও আলাদা কিছু নয়। তাই কথায় কথায় বিরক্ত হবেন না। একটু প্ল্যানিং করে চললে দু’দিকই ব্যালান্স করে চলতে পারবেন।