পবিত্র রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস। এ মাসে প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক নর-নারী রোজা পালন করে থাকেন। বড়দের দেখাদেখি শখ করে ছয়-সাত বছর বয়স থেকে অনেক শিশুই রোজা রাখার চেষ্টা করে। এ সময় অনেক মা-বাবা শিশুদের রোজা রাখতে উৎসাহিত করেন। আলেমরা কেউ কেউ শিশুদের বয়সের এ সময়কে ১০ বছর বয়স থেকে নির্ধারণ করেছেন। আসলে রোজা রাখার বিষয়টা শিশুর শারীরিক গঠনের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। যাহোক, রোজা পালন বড়দের মতো শিশুদের জন্যও উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা পালনে শিশুর ধৈর্য ও মানসিক শক্তি বাড়ে। তার রক্ত পরিশুদ্ধ হয়। এ সময় শিশুদের শরীরের খারাপ পদার্থগুলো কিডনি, অন্ত্র দিয়ে বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয়।
বড়দের দেখাদেখি যখন বাড়ির ছোট শিশুটিও রোজা রাখতে চায়, মা-বাবা তখন চিন্তায় পড়ে যান শিশুর সারাদিনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ নিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের রোজা রাখতে কোনো নিষেধ নেই। শুধু মা-বাবা কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখলেই চলবে। শিশুর শরীরে যেন পানির ঘাটতি না হয়, সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে।
শিশুদের বাড়তি সতর্কতা
দীর্ঘ সময় রোজা রাখলে শিশুদের একটু কষ্ট হবেই। এ সময় তারা দুর্বল হতে পারে। গ্রীষ্মকালে রোদের দাবদাহে গরম বেশি অনুভূত হওয়ার কারণে ঘাম বেশি হয়। এতে আপনার শিশু পানিস্বল্পতায় ভুগতে পারে কিংবা শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই ইফতারের পর থেকে তাকে বেশি পরিমাণে পানি, শরবত, স্যালাইন পান করান। পাশাপাশি রসাল ফল যেমন—আনারস, তরমুজ, বাঙ্গি, কমলালেবু, মাল্টা, শসা ইত্যাদি খাওয়ান। এতে শিশুর মিনারেলের অভাব পূরণ হবে ও পুষ্টি ঠিক থাকবে।
খাবারে সতর্কতা
শিশুদের খাবারে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। তাই রমজানে তাদের খাবার তালিকাও হতে হবে একটু ভিন্ন। এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো-
শিশুকে বাইরের খাবার দেবেন না
রোজায় বাইরের তৈরি খাবারই বেশি খাওয়া হয়। এক্ষেত্রে খাবারগুলো কতটা স্বাস্থ্যসম্মত সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে মা-বাবাকে। কারণ বাইরের এই খাবারগুলো সকাল থেকেই তৈরি হয়। এখন গরমকাল, তাই খাবারগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। আর বাইরের এসব খাবারে শিশুদের ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, বদহজমসহ বিভিন্ন পেটের পীড়া হতে পারে।
ভাজাপোড়া খাবার কম দিন
বেশি ভাজাপোড়া খাবার খেলে শিশুদের পেটে গ্যাস, বদহজম ও পেট ব্যথা দেখা দিতে পারে। তাই যতটা সম্ভব শিশুদের ভাজাপোড়া ও তেলের খাবার কম খেতে দিন।
ইফতারে স্যালাইন ও ফলমূল রাখুন
ইফতারের সময় শিশুদের শরবত, স্যালাইন, ফিরনি, খেজুর, শসা, কলা, ফলমূল, দই-চিঁড়া খেতে দিন। ছোলা-মুড়ি কম খাওয়াই ভালো। যেহেতু গরমে এসব খাবার খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, সহজেই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে, তাই বাসি খাবার শিশুদের দেবেন না। নতুবা এই খাবার থেকে শিশুর ডায়রিয়া, আমাশয় কিংবা টাইফয়েড হতে পারে।
প্রচুর পানি পান করান
ফ্রিজে খাবার রাখলে গরম করে খেতে দিন। শিশুদের দুর্বলতা দূর করতে প্রচুর পানি পানের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার, শাকসবজি, ফলমূল বেশি করে খেতে দিন। একসঙ্গে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়ানো ভালো। তবে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার শিশুদের বেশি দেবেন।
রোদে ঘোরাঘুরি থেকে বিরত রাখুন
এই গরমে রোজা রেখে শিশুরা যেন বেশিক্ষণ রোদে ঘোরাঘুরি বা খেলাধুলা না করে, সেদিকে লক্ষ রাখুন।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
অনেক শিশু-কিশোর সেহরির সময় উঠতে পারে না কিংবা মা-বাবা তাদের সেহরির সময় ডাক না দেওয়ায় তারা খাবার না খেয়েই রোজা রাখে। এতে দিনের শেষভাগে শরীরের গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তাই ইফতারে এসব শিশুদের চিঁড়া-মুড়ি খাওয়ান। এসব খাবারে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকায় তা শরীরে গ্লুকোজ ধরে রাখতে সাহায্য করে। তবে যে শিশুরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের রোজা রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সেহরিতে আশঁযুক্ত খাবার দিন
সেহরিতে শিশুদের আঁশজাতীয় খাবার যেমন—শাকসবজি, ফলমূল বেশি করে খেতে দিন। এ ধরনের খাবার হজমে সহায়ক। রোজা রেখে যদি শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় অথবা অসুস্থ হয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে শিশুদের রোজা না রাখাই উচিত। আবার রোজা অবস্থায় যদি শিশুর তীব্র মাথাব্যথা হয়, এর সঙ্গে বমি হয়, তবে তাত্ক্ষণিক রোজা ভাঙতে বলুন। তাকে বোঝান, সে সুস্থ হলে আবারও রোজা রাখতে পারবে।