খুব পুষ্টিকর আর সেই সাথে সুস্বাদু একটা খাবার হলো টমেটো। এই সবজিটি যেমন কাঁচা খাওয়া যায় তেমনি রান্না করেও খাওয়া যায়। কম ফ্যাট এবং কম ক্যালোরির টমেটো যে কোনও বয়সের মানুষের জন্যই উপকারি। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল থাকার কারণে নিয়মিত টমেটো খেলে স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে শুরু করবে। আর টমেটোর অন্যতম উপাদান হলো লাইকোপিন। টমেটো যত লাল, লাইকোপিন ততই বেশি। খুব শক্তিশালী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে লাইকোপিনের রয়েছে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। টমেটোর গুণের ফিরিস্তি শুনে টমেটো খাবার ইচ্ছে হতেই পারে।
টমেটোর স্যুপ কিংবা টমেটো ফ্লেভারের চিপসের ভক্ত অনেকেই। কিন্তু একটি টমেটো খেতে বলা হলে মুখ কুঁচকে না করেন সবাই। অনেকে রান্নায় টমেটো খেতে পছন্দ করেন।
আবার স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই আছেন যারা টমেটো পছন্দ করেন না। কাঁচা বা সালাদ খেতে গেলে টমেটোর সাথে খানিকটা লবন ও অন্যান্য অনেক কিছু মিলিয়ে খেতেই পছন্দ করেন সকলে। কিন্তু এভাবে লবণ বেশী খাওয়া হয় বলে ডাক্তাররা নিষেধ করে থাকেন। টমেটোর সবচাইতে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায় যদি কাঁচা খাওয়া যায়। প্রতিদিন অন্তত ১ টি কাঁচা টমেটো আপনার দেহকে অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে রেহাই দেবে।
রাতকানা রোগ প্রতিরোধে টমেটো
টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ। বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে প্রতিদিন ১টি কাঁচা টমেটো খাবার অভ্যাস করলে রাতকানা রোগের হাত থেকে রেহাই পাবে। এছাড়া চোখের দীর্ঘ দৃষ্টি ও ক্ষীণ দৃষ্টির সমস্যাও প্রতিরোধ করে টমেটো।
রক্ত স্বল্পতা ও রক্তের সমস্যা জনিত সমস্যা সমাধানে টমেটো
গবেষণায় দেখা যায় দিনে অন্তত ১ টি টমেটো খেলে তা দেহের ৪০% পর্যন্ত ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করে। টমেটোর ভিটামিন এ, পটাশিয়াম ও আয়রন রক্ত পরিশোধিত করে। এবং টমেটোর ভিটামিনকে রক্ত স্বল্পতা দুর করে ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমায় টমেটো
টমেটোতে বিদ্যমান ‘লাইকোপেন’ দেহের কোলেস্টোরল কমাতে সহায়তা করে। এবং রক্ত সঞ্চালন ধমনীতে ফ্যাট জমতে বাঁধা দেয়। প্রতিদিন ১ টি টমেটো হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমায় প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ। এবং ওজন কমাতেও অত্যন্ত সহায়ক।
ক্যান্সার প্রতিরোধে টমেটো
টমেটোতে বিদ্যমান প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‘লাইকোপেন’ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমানোর পাশাপাশি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। সপ্তাহে ৫ টি টমেটো ফুসফুস, পাকস্থলী ও প্রস্ট্রেট ক্যান্সারের ৪০% পর্যন্ত ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
খাবারে টমেটোর পুষ্টি বেশি করে আনার রয়েছে কিছু কৌশল। আসুন সেগুলো দেখে নেওয়া যাক।
১) কাঁচা টমেটো
– রান্না না করে টমেটো খাবার একটাই উপায় আমাদের জানা আছে আর তা হলো সালাদ। বেশ করে ধনেপাতা, মরিচ, বিভিন্ন মশলা সহযোগে টমেটোর সালাদ যে কোনও খাবারের সাথেই খেতে পারেন। ভাবছেন শুধু ভাতের সাথে খাবেন? তা কেন? পোলাও, রুটি, নানা, পরোটা এসবের সাথেও চমৎকার লাগে টমেটোর সালাদ। এভাবে খেলে টমেটোর পুষ্টি যেমন পাওয়া যাবে, তেমনি চর্বিযুক্ত মাংস খাবার বদলে সালাদ বেশি করে খেলে যারা ওজন কমাতে চান তারাও উপকার পাবেন।
– সালাদ ছাড়াও টমেটোর জুস তৈরি করে খেতে পারেন। শুধু টমেটো অথবা অন্যান্য সবজি মিশিয়েও তৈরি করতে পারেন পুষ্টিকর জুস। অনেকে এর সাথে চিনি মিশিয়ে খেতে পছন্দ করেন, অনেকে আবার চিনির বদলে একটু লবণ মিশিয়ে খান। হালকা খিদে পেলে জাঙ্কফুড না খেয়ে এমন একগ্লাস জুস খেয়ে নিলে পেটও ভরবে, শরীরেরও উপকার হবে।
– টমেটোর জুস খেয়ে পেট ভরবে না, এমনটা চিন্তা করলে টাটকা টমেটো দিয়ে তৈরি করতে পারেন স্যান্ডউইচ। এতে বিভিন্ন রকমের মশলা দিতে পারেন। তবে মাখন বা মেয়নেজ ব্যবহার করবেন না অবশ্যই।
– এত কিছু না করে শুধুই টমেটো চিবিয়ে খেয়ে নিতে পারেন! আপেল যেভাবে খাওয়া হয় সেভাবে অথবা টমেটো কেটে নিয়ে খেতে পারেন। রাত জেগে কাজ করার সময় এমন একটা টমেটো কেটে রাখতে পারেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে এক টুকরো করে খেতে থাকলে ক্ষুধা কোথায় যাবে টেরই পাবেন না!
২) রান্না করা টমেটো
মাছ রান্নায় তো বটেই, মাংস রান্নাতেও টমেটো ব্যবহার করতে পারেন অন্যরকম স্বাদের জন্য। আর সবজি রান্নার সময় অন্য সবজির সাথে দিয়ে দিতে পারেন টমেটো। তেলের সাথে রান্না করলে যেহেতু টমেটোর পুষ্টিগুণ বেড়ে যায়, সুতরাং এভাবে খেলে ক্ষতি নেই, বরং উপকার বেশি। একই ভাবে টমেটোর চাটনিও তৈরি করতে পারেন।
– বেগুনের মত একই পরিবারের গাছ টমেটো। বেগুন যেভাবে ব্যবহার করা যায়, টমেটোও অনেকটা সেভাবে ব্যবহার করা যায়। বেগুনের মত করে টমেটো হালকা পুড়িয়ে বা সেদ্ধ করে তৈরি করতে পারেন মজাদার ভর্তা।
– বিভিন্ন রকম খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত হয় টমেটো কেচাপ কিন্তু দোকান থেকে কেনা কেচাপে থাকে বিভিন্ন রকমের কৃত্রিম উপাদান। তার চাইতে বাসায় টমেটো কেচাপ তৈরি করে রেখে দিন। যখন টমেটোর দাম একটু কমতির দিকে থাকে তখন একবারে বেশি করে কিনে কেচাপ বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। রান্নাতেও ব্যবহার করতে পারবেন। একই ভাবে টমেটোর চাটনিও তৈরি করতে পারেন।
– বেশি করে টমেটো দিয়ে স্যুপ তৈরি করতে পারেন। ব্রেকফাস্টে এই স্যুপ অসাধারণ। ওজন কমাতে ইচ্ছুক যারা তারা অল্প তেল দিয়ে এই স্যুপ খেতে পারেন নিয়মিত।