(কিশোর গ্যাং নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন)
কিশোর অপরাধ আগেও ছিল, বর্তমানেও আছে। তবে দিন যত যাচ্ছে তাদের অপরাধগুলো ক্রমেই হিংস্র, নৃশংস ও বিভীষিকাপূর্ণরূপে দেখা দিচ্ছে। খুন, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মতো হিংস্র ধরনের অপরাধ করার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে এবং এখনো বেড়েই চলেছে। সংঘবদ্ধভাবে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় নৃশংসভাবে খুন করা হচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষার লক্ষ্যে এখনই এর লাগাম টেনে ধরা দরকার। না হলে ভবিষ্যতে এটি খুব ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বৈশিষ্ট্য
এক্ষেত্রে কিশোরদের বয়সটা জানা বেশি জরুরি। কারা কিশোর গ্যাংয়ে যোগ দিচ্ছে বা কত বছর বয়সে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, এদের বয়সসীমা ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যেই বেশি হয়ে থাকে। কী করে বুঝবেন যে এরা কিশোর গ্যাংরে সঙ্গে যুক্ত আছে? সাধারণত প্রতিটি গ্যাংয়ের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় এমন একটি নির্দিষ্ট নাম ও লোগো থাকে। গ্যাং সদস্যদের মধ্যে সেই নাম ও লোগো শরীরে ট্যাটু করার অথবা দেয়ালে লিখনের প্রবণতা রয়েছে। তারা নির্দিষ্ট একটি এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে এবং সর্বদা আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা করে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্যাংয়ের প্রচার-প্রচারণার নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা গ্যাং সংগঠন নিয়ে গর্ববোধ করে এবং গ্যাং সদস্য হিসাবে পরিচিত হয়ে তৃপ্তি অনুভব করে। ক্ষেত্রবিশেষে গ্যাংয়ে একই রকমের জামাকাপড় পরার স্টাইল দেখা যায় এবং কেউ কেউ অথবা সবাই জুয়েলারি ও অলংকার পরিধান করে থাকে। এ ছাড়া আধিপত্য বিস্তারের জন্য তারা অস্ত্র যেমন- ছুরি, রামদা, হকিস্টিক, বন্দুক ইত্যাদি সংগ্রহে রাখে।
কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার কারণ
সমাজব্যবস্থা, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাহচার্য, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রের নানাবিধ উপকরণ গ্যাং কালচার তৈরির উপাদান হিসাবে কাজ করে। একই কমিউনিটির ভেতর যখন দরিদ্র শ্রেণি ও উচ্চবিত্তের বসবাস থাকে, তখন উচ্চবিত্তের জীবনযাত্রা দেখে দরিদ্র শ্রেণির সন্তানরা নিজেদের ভাগ্যকে বঞ্চিতদের ভাগ্যের সঙ্গে তুলনা করে হতাশা অনুভব করে। আবার কমিউনিটিতে যখন অস্ত্র ও বিশেষ করে মাদকের দৌরাত্ম্য থাকে তখন গ্যাংয়ের অস্তিত্ব থাকে এবং বিপরীতে আরেকটি গ্যাং তৈরি হতে পারে অথবা ওই গ্যাংয়ের বিদ্রোহী, দলছুট বা বহিষ্কৃত সদস্যরা আরেকটি গ্যাং তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ কমিউনিটিতে যখন গ্যাংয়ে যোগদান করার অভ্যাস অথবা প্রথা হয়ে দাঁড়ায়, তখন একজন অপরকে বা সিনিয়রকে দেখে গ্যাং সদস্য হতে উৎসাহী হয়। কখনো ভিনদেশি কালচারের অনুপ্রবেশে অনুকরণপ্রবণশীল কিশোররা সহিংসতা সম্পর্কে জানতে পারে। তখন সহিংসতায় আকৃষ্ট হয়ে ওই কালচার রপ্ত করতে চায় কিশোররা। তাই পরিবারের করণীয়টা এখানে বড় হয়ে দাঁড়ায়।
পারিবারিক পরিবেশ অনেক ক্ষেত্রেই এ সমস্যার পেছনে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখে। পারিবারিক বিশৃঙ্খলা অথবা ডিভোর্সের কারণে ভেঙে যাওয়া পরিবারে সন্তানদের মাঝে হতাশা তৈরি হয়। নেশাগ্রস্ত পরিবার যেখানে মাদক/নেশাজাতীয় দ্রব্যের নিয়মিত আসর বসে, সেখানে কম বয়সে অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া খুবই নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। অনেক সময় দেখা যায় পরিবারের কেউ গ্যাং সদস্য থাকলেও কিশোররা এ পথে আসতে উৎসাহিত হয়। পরিবারের কোনো সদস্য বা পিতা-মাতা রোল মডেল হতে ব্যর্থ হলে অথবা পিতা-মাতার কর্ম অদক্ষতা ও বেকারত্বের ফলে আর্থিক উপার্জনের জন্য সন্তানদের মাঝে গ্যাং সদস্য হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। আবার কখনো কখনো কর্মজীবী বা ব্যবসায়ী পিতা-মাতার পক্ষে সন্তানকে সময় দেওয়া দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে গ্যাং তৈরির মধ্য দিয়ে সন্তান একাকিত্ব ও হতাশা দূর করার চেষ্টা করে। একাধিক বিবাহ এবং পারিবারিক অশান্তিও গ্যাং তৈরির কারণ হতে পারে।
শিক্ষাব্যবস্থাও এ কালচার গড়ে ওঠার পেছনে কিছুটা দায়ী। যেমন- দুর্বল ছাত্রদের মধ্যে গ্যাং গড়ে তোলার প্রবণতা থাকে। ক্রমাগত শিক্ষকের বঞ্চনা, খারাপ ফলাফল, সহপাঠী দ্বারা বিদ্রুপের শিকার থেকে হতাশা তৈরি হতে পারে। হতাশা থেকে পরে গ্যাংয়ে যোগদানের প্রবণতা তৈরি হতে পারে। স্কুলের পাঠদান প্রক্রিয়া কোনো কারণে ব্যাহত হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা জাগ্রত হতে পারে। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে মাদককে কেন্দ্র করে আড্ডা ইত্যাদি তৈরি হয়, যা থেকে গ্যাংয়ের উদ্ভব হতে পারে। বন্ধু-বান্ধবের যদি অপরাধপ্রবণতা থাকে বা তারা অপরাধী চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে, মাদক সেবনের প্রবণতা থাকে বা মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এভাবে জড়িত হওয়ার কারণের মধ্যে আরও রয়েছে- ব্যক্তি পর্যায়ে অপরাধ জগতে যুক্ত হওয়ার মানসিকতা, দুর্বল চিত্তের ব্যক্তিত্ব, হিরোইজম দেখানোর প্রবণতা, অনুকরণপ্রবণতা, অল্প বয়সে যৌন আসক্তি বা যৌন আসক্তি হওয়ার ক্ষেত্র ও সুযোগ তৈরি হওয়া।
দেশে কিশোর গ্যাংয়ের বর্তমান অবস্থা
মূলত ২০১৭ সালে উত্তরায় আদনান হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংয়ের সহিংসতার নির্মমতা জনসম্মুখে উন্মোচিত হয়। ৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কের উপর আদনান কবিরকে (১৪) সংঘবদ্ধ গ্যাং মারাত্মকভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। তখন তিনটি গ্যাংয়ের (ডিসকো বয়েস, বিগবস্ ও নাইনস্টার) মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আদনানকে ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করা হয়। ফলে আদনানের মৃত্যু হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকার একটি আভিযানিক দল উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়ক এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর আদনান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি এবং ডিসকো বয়েস গ্যাং গ্রুপের দলনেতাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরে মূল আসামি তালাচাবি রাজুকেও র্যাব গ্রেফতার করেছিল। আমরা জানি, র্যাবের হাতে এ সময় একের পর পর গ্যাং ধরা পড়েছে এবং তাদের ধরতে মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করেছিল র্যাব। ২০১৭ সাল থেকে অদ্যাবধি র্যাব ২৭২ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। শুধু হত্যাকাণ্ডের পৃথক চারটি ঘটনায় মোট ২০ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর র্যাব ২০১৯ সালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক সেবন, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের সংশোধনাগারে প্রেরণ করেছিল, যা সে সময় দেশে আলোচনার শীর্ষে ছিল।
পুলিশ ও র্যাব সূত্র বলছে, রাজধানীতে এখন অন্তত ৭০ থেকে ৭৫টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এদের সদস্য সংখ্যা দেড় থেকে দুই হাজার। রাজধানীর উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বৃহত্তর মিরপুর, পুরান ঢাকার লালবাগ ও হাজারীবাগ এলাকায়ই মূলত কিশোর গ্যাং ছড়ানো-ছিটানো (২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)। কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তথ্যমতে, কেন্দ্রে থাকা কিশোরদের ২০ শতাংশ হত্যা এবং ২৪ শতাংশ নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি। ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে ৮২১টি মামলায় গ্রেফতারের সংখ্যা ১ হাজার ১৯১। সম্প্রতি ঢাকার উত্তরায় ‘অপু ভাই’ নামে খ্যাত টিকটক ভিডিও নির্মাতা একটি রাস্তা অবরোধ করে ৭০-৮০ জন মিলে টিকটক ভিডিও তৈরি করছিল। সে সময় রবিন নামে একজন প্রকৌশলী গাড়ি নিয়ে রাস্তা পার হতে গেলে অপুসহ তার দল মিলে মারধর করে ওই ব্যক্তির মাথা ফাটিয়ে দেয়।
একটি কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়েছিলেন এমন একটি ছেলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল র্যাবে থাকাকালীন। সাজিদ হক (ছদ্মনাম) কোনো এক সময় কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। উঠতি বয়সের পাড়ার ছেলেদের দলবলের সঙ্গে যুক্ত হয় পাড়ার একটি ছেলে। তার সিগারেট খাওয়া দেখে প্রথমে সাজিদের একটু খারাপ লাগলেও অনেক দিন দেখার পর নিজেও একদিন খাওয়া শুরু করে। এভাবেই শুরু হয় সাজিদের সিগারেট খাওয়া। ক্লাস নাইনে পড়ে। টাকা-পয়সা নেই। কিন্তু সিগারেটের নেশা তাকে ধরে ফেলেছে। বাসা থেকেও বাবা-মা টাকা দেয় না। কিন্তু সিগারেট তার খেতেই হবে। একদিন-দুদিন পর সেই ছেলেটার সঙ্গে মিশে নানারকম অপকর্মে লিপ্ত হতে থাকে সাজিদ। চুরি, ছিনতাই থেকে শুরু করে সবকিছুই করে পরিবারের অজান্তে। আস্তে আস্তে ওদের গ্যাংটা বড় হতে থাকে। বড়লোকের ছেলেরা এসে জমা হতে থাকে। একটা আড্ডার জায়গা হয়। পরে একসময় ছেলেটার বাবা মারা যায়। এরপর সংসারের নানা বিষয়ের চিন্তা থেকে ফিরে আসে ছেলেটি। এখন সে খুব ভালো একটা চাকরি করে সংসারে মা-বোনকে দেখে।
সমাধান কীভাবে
১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী গ্যাং কালচারে ব্যাপক সহিংসতা প্রবেশ করে। অনেক ক্ষেত্রেই কিশোর গ্যাংদের নিয়ন্ত্রক বা পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় সমাজের কিছু বড়ভাইয়ের ছায়া থাকে। তবে দলগতভাবে ছায়া প্রদানের চেয়ে অনেকেই মনে করেন ব্যক্তি পর্যায়ে সেল্টার বা ছায়া প্রদানই বেশি হয়ে থাকে। তবে যারাই নিয়ন্ত্রক/পৃষ্ঠপোষক হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে আমাদের বদ্ধপরিকর থাকতে হবে। সবারই উচিত প্রত্যেক ছেলেমেয়েকে উঠতি বয়সে নজরে রাখা, তারা কী করছে না করছে সব সময় খোঁজখবর রাখা এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে সময় দেওয়া। কিশোর অপরাধ কমাতে হলে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিভঙ্গি আমূল পাল্টাতে হবে। অপরাধী হিসাবে না দেখে শিশু-কিশোরদের কৃতকর্মকে মানসিক স্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা জরুরি। দেশের একটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সংক্ষিপ্ত গবেষণায় দেখা যায়, সেখানে থাকা ৫৭ শতাংশ শিশু-কিশোরের মানসিক সমস্যা রয়েছে, যার প্রায় অর্ধেকের কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের জন্য সুচিকিৎসার প্রয়োজন।
আমাদের দেশে পর্যাপ্ত কিশোর সংশোধন কেন্দ্র নেই। গাজীপুরে দুটি এবং যশোরে একটি শিশু কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র আছে। এর মধ্যে গাজীপুরের একটি মেয়েদের জন্য। সব মিলিয়ে এ তিনটির ধারণক্ষমতা মাত্র ৬০০ জনের। এ কারণে আটক শিশুদের বড় একটি অংশ কারাগারেই থাকে, উন্নয়ন কেন্দ্রে জায়গা হয় না তাদের। এতে দেখা যায়, আদালতের নির্দেশে কোনো কিশোরকে উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর কিছুদিন পর সে জামিনে বেরিয়ে এসে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়ার ক্ষেত্রে বাজেটে বড় অংশের অন্তর্ভুক্তিতে মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য বরাদ্দ ছিল ৬৫ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা, যা পরবর্তী বছরে গিয়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার ১৯০ কোটি টাকায়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় কিশোরদের মনন ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে মেধা ও প্রতিভা বিকাশে শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ স্কাউটস, গণিত অলিম্পিয়াড, রোবটিকস্ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদির আয়োজন যেমন- সংগীত, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, লেখালেখি, নাটক ইত্যাদিরও প্রায়োগিক অনুশীলন অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া অবস্থার উন্নয়ন করতে হলে কমিউনিটি লিডারশিপ শক্তিশালী করতে হবে, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করতে হবে। কমিউনিটিতে সুস্থ বিনোদনও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সন্তানকে বিভিন্ন চারিত্রিক গুণাবলির শিক্ষা দিতে হবে, তাকে সময় দিতে হবে এবং একইসঙ্গে সন্তানের আচার-আচরণের ওপর খেয়াল রাখতে হবে যাতে পারিবারিক শিক্ষা সমুন্নত থাকে। স্কুল কর্তৃপক্ষের নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে- ক্লাস ঠিকমতো হচ্ছে কিনা; স্কুলে মাদক সেবন, র্যাগিং ইত্যাদি হচ্ছে কিনা।
দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও এগিয়ে আসতে হবে। গ্যাং সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে ডাটা বেইজ তৈরি করতে পারলে এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ। যেসব স্থানে গ্যাং সদস্যরা আড্ডা দেয়, সেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি থাকতে হবে। গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষক ও নিয়ন্ত্রকদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যে কোনো ধরনের অপরাধ বড় রূপ নেওয়ার আগে অপরাধীকে গ্রেফতার করতে হবে।
আঠারো শতকের শেষে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার শহরে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণের জন্য স্যালফোর্ড ল্যাডস ক্লাব নামে ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিল গ্রোভস্ পরিবার, আজ যার বিশ্বব্যাপী পরিচয় ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাব নামে। রবার্ট ব্যাডেন পাওয়েল, যিনি স্কাউট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বৈশ্বিকভাবে পরিচিত, তার হাত ধরেই এ ক্লাব সামনে এগিয়ে গিয়েছিল। এভাবে শিশু-কিশোরদের সৃজনশীল কাজের পরিবেশ তৈরি করে দিলে এবং উন্নয়নমূলক কাজের দিকে আগ্রহী করে তুলতে পারলে বাংলাদেশেও কিশোর গ্যাং নামক দুঃস্বপ্নের আধিপত্য কমে যাবে বলে আশা করা যায়।
লেখক: কর্নেল মো. এমরানুল হাসান বিপিএম (সেবা) : সাবেক র্যাব কর্মকর্তা