স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত শুভ নববর্ষ আজ। হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০১৮। অভিবাদন নতুন সৌরবর্ষকে। বিশ্বের বয়স আরও এক বছর বাড়লো। এক বছরের ‘আনন্দ–বেদনা, আশা–নৈরাশ্য আর সাফল্য–ব্যর্থতার পটভূমির ওপর আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই প্রিয় বাংলাদেশ নতুন বছরে পর্বতদৃঢ় একতায় সর্ব বিপর্যয়–দুঃসময়কে জয় করবে অজেয় অমিত শক্তি নিয়েণ্ড এ সংকল্পের সোনালি দিন আজ। আশাবাদীরা ধন্য হবে পুরো একটি বছরের অভিজ্ঞতায় শাণিত হয়ে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখছে বলে। নৈরাশ্যবাদীরা তখন মৃত্যুর দিকে আরো একটু এগিয়ে যাওয়ার ভয়ে তটস্থ। যে যেভাবেই ভাবুক না কেন, আমরা আশাবাদী। আশা করি, সৃষ্টি ও মঙ্গলের বারতা নিয়ে আগমন ঘটেছে ২০১৮ সালের। অমিত সম্ভাবনার আশা জাগানিয়া নতুন বছরকে তাই বরণ করি গভীর আবেগে, পরম মমতায়। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানকে পাথেয় করে ভবিষ্যতের সোনালি রোদ্দুর দেখার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাক সকলের জীবনে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবে যার উদ্ভাসন, সেই স্বাধীন জাতি– রাষ্ট্রে এটিই স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কী হারিয়েছি, প্রত্যাশার কতোটা পূরণ হয়নি, তা নয় বরং যা পেয়েছি সেটিই হোক প্রেরণার উৎস। সেখানটাতেই জীবনের গতি, সমাজের অগ্রসরতার চাকা ঘূর্ণায়মান। নতুন বছর মানেই নতুন উদ্দীপনা, নতুন প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে চলা। পেছনে ফেলে আসা বছরের ভুল, হতাশা, দুঃখ, গ্লানিকে দূরে ঠেলে নতুন উদ্যমে সাহস নিয়ে পথচলা। সভ্যতার ইতিহাস বলে, অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়ার এই স্পৃহাই মানুষকে নিয়ে এসেছে এতদূর। তাই নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে এগিয়ে যাবে বিশ্বের অন্যান্য জাতির মতো বাঙালিরাও। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বয়ে চলে সময়। পাল্টে দিয়ে যায় অনেক কিছু। কারো সময় যায় ঝড় ঝাপটায়, কারো নিস্তরঙ্গ হয়ে; আনন্দ–বেদনার যুগলবন্দিতে। এটাই শাশ্বত নিয়ম। এভাবেই চলতে চলতে একদিন বেজে ওঠে অমোঘ মৃত্যুঘণ্টা। আবার ওই মৃত্যুব্যথাও সহনীয় হয়ে যায়। জীবন এমন অম্লমধুর বলেই পৃথিবী শেষ পর্যন্ত সুন্দর, অর্থময়।
নতুন বছরে অনেক প্রত্যাশা মানুষের। ব্যক্তি জীবনে, সামাজিক জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে। ২০১৮ সালে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কী আকার ধারণ করবে এ মুহূর্তে তা বলা মুশকিল। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা নতুন বছরটি বাঙালি তথা বিশ্ববাসীর জন্য নিয়ে আসবে আনন্দের সব খবর। ইতিবাচক ঘটনার আধিক্য থাকবে সমাজে। নতুন বছরের প্রথম দিনে বরাবরই মানুষ নতুন আশায় বুক বাঁধে। ব্যক্তি–মানুষের জমা–খরচের হিসাবের বাইরে রয়েছে দেশ ও জাতির হিসাব–নিকাশের ব্যাপার। জাতীয় জীবনে সেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করতে চাই, নতুন বছরের প্রতিটি সম্ভাবনাময় দিনকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন প্রতিটি মানুষ তার নিজের নিজের অবস্থান থেকে। তবেই না আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাতৃভূমি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র আজম নাছিরউদ্দিন পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। নতুন বছর সুখ শান্তি সমৃদ্ধিতে কাটুক সকলের– এ প্রত্যাশা তাদের। পৃথক পৃথক বাণীতে তারা দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রত্যাশা করেছেন– আজ থেকে উদ্ভাসিত হবে সজীব সবুজ নতুনতর সেই দিনের, যা মুছে দেবে অপ্রাপ্তির বেদনা। জাগাবে নতুন প্রত্যয়ে সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাবার প্রেরণা।
রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক নানা ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাবে– এমন প্রত্যাশা দেশের সব মানুষের। গত বছর যে আশা–আকাঙ্খা নিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল তার অনেকখানি হয়তো পূরণ হয়নি। কিন্তু তাতে কি? নতুন উদ্যম নিয়ে এগিয়ে গেলে সাফল্য ধরা দেবেই। গত বছরে রাজনৈতিক, সামাজিক,পারিবারিক সকল ক্ষেত্রেই হিংস্রতা দেখা গেছে। অনিরাপদ ছিল মেয়েরা। নিশ্চুপে নারী নির্যাতন ঘটেছে ; ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যার খবর আমাদের বিচলিত করেছে। সমাজে মেয়েরা অর্ধেক, সর্বক্ষেত্রে তারা এগিয়েছে, এগোচ্ছে; অর্থনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ ও ভূমিকা চমৎকার। তবে তাদের নিরাপত্তা বাড়েনি। নারীর নিরাপত্তাহীনতা সামাজিক বাস্তবতারই প্রতিফলন। জন্মমুহূর্তে কোনো শিশুই নারী থাকে না, তাকে নারী করে তোলা হয় এবং শিশুটি যতই নারী হয় ততই তার বিপদ বাড়ে। বোঝা যায় সমাজ কেমন হিংস্র, সেখানে নৃশংসতা কেমন বিকাশমান।
নতুন বছরে সকলের প্রত্যাশা বছরটি হবে সম্ভাবনার। তবে নতুন বছরটি শুরশু হলেও বিগত বছরে সমাধান না হওয়া কিছু সমস্যার জের বইতে হবে এ বছরও। সাধারণ মানুষ চাইবে এ বছর এসব না জানা প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয় মিলবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরকারের কৌশল আর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাকারীদের খুঁজতে থাকা বিরোধী দলের অবস্থান কীভাবে সামাল দেয় প্রতিপক্ষ তা দেখার আশায় থাকবে জনগণ। সাথে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের পৃথক অবস্থানের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিগত বছরের জের চলবে নতুন বছরেও। জাতীয় সংসদ নির্বাচন কীভাবে হবে, বিরোদী দল নির্বাচনে অংশ নিতে কী কী শর্তে রাজি হবে– ইত্যাদি নানা ইস্যুতে এবছরও রাজনৈতিক মাঠ সরগরম থাকবে। সাথে রোহিঙ্গা ইস্যুতো আছেই। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত বাংলাদেশ কতটুকু তার মোকাবেলা করতে পারছে, জ্বালানি তেল ও সিএনজির দাম, বিদ্যুৎ গ্যাস সংকট, যানজট, গুপ্ত খুন, অপহরণ, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ নিশ্চয় সহনীয় পর্যায়ে আসবে নতুন বছরে। পাশাপাশি দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জঙ্গিবাদ, যুদ্ধাপরাধ, ক্ষুধা, দারিদ্র–অশিক্ষা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে অবস্থান নিতে পারবো– এই হোক সকলের কাম্য।
২০১৮ সালে আশা থাকবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবে। ন্যায়বিচার, সুশাসন, গণতন্ত্রের সাথে জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আমাদের উন্নয়ন ও উৎপাদনের প্রধান চালিকাশক্তি কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে যা কিছু বাধা তা অপসারিত হবে নতুন বছরে–এই প্রত্যাশা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের। আশা করতে চাই শ্রমিক তার ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমের যথাযথ মূল্য পাবে। নতুন বছর বিগত বছরের ইতিবাচক ও নেতিবাচক সব ঘটনার প্রতিক্রিয়া সঙ্গে করেই অগ্রসর হবে। বছরের পালাবদল আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। তারপরও যে বছরটি চলে যায়, তার জন্য এক ধরনের আবেগ কাজ করে। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক অবস্থার যদি পরিবর্তন ঘটানোর মতো মানবিক উদার মূল্যবোধ যদি গড়ে তুলতে না পারি, তবে পুরনো ক্যালেন্ডারের স্থানে হয়তো নতুন ক্যালেন্ডার শোভা পাবে, কিন্তু ইতিবাচক কোন পরিবর্তন আসবে না। নতুন বছর অর্থবহ হয়ে উঠবে তখনই যদি বিগত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে অপূর্ণতাগুলো পূর্ণ করার প্রয়াস নেয়া যায়। ২০১৮ সুসময় বয়ে আনুক আমাদের জীবনে। প্রবাদ উল্টে এ বছর যেন আমরা বলতে পারি, ’যায় দিন খারাপ, আসে দিন ভালো’।
আকাঙ্খাই জীবনের ভেলা। এ সত্যটা মনে রেখে সম্মিলিত নিষ্ঠায় যে যার অবস্থান থেকে অগ্রসর হলে বিশাল সম্ভাবনার এ দেশ নিশ্চিত সোনার বাংলায় পরিণত হবে। আমাদের ছেলে মেয়েরা এভারেস্ট জয় করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করার কৃতিত্ব দেখায়। বঙ্গবন্ধুর খুনীরা মাথানত করতে বাধ্য হয়,কাঠগড়ায় দাঁড়ানো একাত্তরের ঘাতকদের চোখে মুখে আতঙ্ক খেলা করে, ক্রিকেটাররা বিশ্ব শাসন করে তখন সঙ্গত কারণেই আমরা বলতে পারি “নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়………..।”