এই বৃষ্টি তো এই ভ্যাপসা গরম। আবহাওয়া এখন এমনই। প্রকৃতির পটপরিবর্তনের এই সময় হুট করে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে শিশুরা। শিশুর সুস্থতায় এই সময় বাড়তি খেয়াল রাখা চাই। শিশুর পরিচ্ছন্নতা, পোশাকের ধরন, খাদ্যাভ্যাস, রোজকার যত্ন—এসবের পাশাপাশি তার ব্যবহৃত কাপড়গুলোর দিকেও নজর দিতে হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার জানালেন, এই সময় শিশুদের নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস (শ্বাসতন্ত্রের এক ধরনের প্রদাহ), ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস এবং কিছু চর্মরোগ হতে দেখা যায়। ডেঙ্গুজ্বরও হচ্ছে। তবে একটু সচেতন থাকলে এ রোগগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সুস্থতায় যা চাই
■ শিশুকে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি খাওয়ান। বাইরের খোলা খাবার দেবেন না।
■ শিশু ঘেমে যাচ্ছে কি না, খেয়াল রাখুন। ঘাম হলে মুছিয়ে দিন। প্রয়োজনে পোশাক বদলে দিন।
■ বৃষ্টিতে ভিজলেও দ্রুত কাপড় বদলে ভালোভাবে মুছে দিন।
■ খুব প্রয়োজন না পড়লে ডায়াপার পরাবেন না। ডায়াপার পরিয়ে রাখার ফলে র্যাশ হতে পারে। ভেজা অবস্থায় রাখলে ছত্রাকের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই ডায়াপার পরালেও সতর্ক থাকুন যাতে ডায়াপারের স্থানে ঘাম না জমে। ভিজলে একটু পাউডার লাগিয়ে জায়গাটা শুষ্ক রাখতে পারেন।
■ ধূলাময় স্থান এড়িয়ে চলুন। ছায়াযুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে রাখুন শিশুকে। ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসার ব্যবস্থা রাখুন।
■ ঘরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র থাকলেও ঘর খুব বেশি ঠান্ডা করবেন না। ঘরে-বাইরে তাপমাত্রার পার্থক্য খুব বেশি হলে শিশুর সহজেই ঠান্ডা লেগে যাবে। রাতের শেষ দিকে এমনিতেই তাপমাত্রা কমে যায়। এ সময় কৃত্রিমভাবে তাপমাত্রা কমানোর প্রয়োজন হয় না। আর যাদের অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট থাকে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র তাদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ ক্ষেত্রে শুষ্কতা এড়াতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রে একটি পানির পাত্র রাখতে পারেন বা হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। তবে বদ্ধ ঘরের চেয়ে খোলামেলা, উন্মুক্ত পরিবেশ শিশুর জন্য বেশি ভালো।
■ দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করুন।
যেমন পোশাক
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘সহজেই অপরিষ্কার হয়ে যায় বলে শিশুদের পোশাক একটু বেশি লাগে। বর্ষার সময় কাপড় শুকাতেও অসুবিধা হয়। শিশুকে পরিচ্ছন্ন পোশাক পরানোর জন্য তাই কয়েক সেট বাড়তি পোশাক রাখা ভালো।’
এই সময়ে শিশুর জন্য সুতির হালকা, নরম ও আরামদায়ক পোশাক সবচেয়ে ভালো। বয়স অনুযায়ী পোশাক বেছে নিতে হবে। নবজাতকের জন্য হাতকাটা জামা ভালো; কারণ জামার ভাঁজে ঘাম জমে র্যাশ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। হামাগুড়ি দিচ্ছে এমন বাচ্চার জন্য চাই একছাঁটের পোশাক; আর খেয়াল রাখুন, ওদের জামাটা হাঁটুর ওপরেই যেন থাকে। হাঁটু বা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত জামার ঝুল হলে চলতে গিয়ে বাধা পেতে পারে ওরা। ওদের প্যান্ট হতে হবে হাঁটু পর্যন্ত।
প্রি-স্কুল শিশুদের জন্য এমন পোশাক বেছে নিন, যা ওরা নিজেরাই পরতে ও বদলাতে পারবে। চেইন বা হুক দেওয়া পোশাক ওদের জন্য ভালো নয়। ইলাস্টিকযুক্ত প্যান্ট দিতে পারেন।
শিশুকে কোনো অবস্থায়ই ভেজা কাপড় পরানো যাবে না। সব বয়সী শিশুর ক্ষেত্রেই ভারী জিনস প্যান্ট ও ভারী গ্যাবার্ডিনের পোশাক এই সময়ে এড়িয়ে চলা ভালো। বুননের কারণে এসব কাপড় সহজে শুকায় না। তবে প্রি-স্কুল বয়স থেকে শুরু করে আরেকটু বেশি বয়সী বাচ্চাদের হালকা ওজনের গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট বা পাতলা জিনস পরানো যেতে পারে।
বর্ষা মৌসুমে কাপড় শুকাতে ঝক্কিতে পড়তেই পারেন। বৃষ্টি না থাকলে ছাদে বা বারান্দায় কাপড় শুকাতে পারেন। আর ছাদে কাপড় মেলবার স্থানটিতে ছাউনির ব্যবস্থা করলে বৃষ্টিতেও কাপড় ভিজবে না। এমন ব্যবস্থা না থাকলে ঘরেই কাপড় শুকাতে হবে। তবে সেটি শিশুর ঘরে না হলেই ভালো, বিশেষত নবজাতকের ঘরে একেবারেই নয়। ছোট কাঁথা ভিজে গেলে অবশ্যই তা শুকিয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে।
সাধারণত পাতলা সুতির কাপড় এক দিন পরই শুকিয়ে যায়। খুব প্রয়োজন হলে হালকা ভেজা কাপড় ইস্ত্রি করে নিতে পারেন, তাহলে ভেজা ভাবটা আর থাকবে না। এমনটাই জানালেন মাহমুদা আক্তার।
লেখক :