ঘুরতে কে না ভালোবাসে ? তবে কর্মজীবনে প্রবেশের পর খুব একটা সময় হয়না ভ্রমনের। যেটুকু সময় সুযোগ হয়, তাতে চেষ্টা করি একটু বের হয়ে মনকে সতেজ করতে। এবার ঈদের ছুটিতে আমারা হুট করেই সিদ্ধান্ত নিলাম ঘুরতে যাওয়ার। অনেক দিন ধরেই কয়েকজন সহকর্মীর পরিকল্পনা ছিলো সিলেটের বিছানাকান্দি যাবার। তবে সবার এক সাথে ছুটি না থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। তাই দুই সহকর্মী মিলে যাবার সিদ্ধান্ত হলো, সাথে যার যার পরিবার। অফিস শেষ করে সেদিন রাতের ট্রেনেই রওনা দিলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে। সকালে পৌছে হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা পর্ব সেরে নিলাম। তারপর গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা, মানে বিছানাকান্দি।
সিলেট শহর থেকে যাওয়া এবং আসার জন্যে আমরা দুই হাজার টাকায় একটা অটোভাড়া নিলাম। চালকের নাম ইব্রাহিম এক অটোতে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে আমরা সাতজন রওয়া দিলাম, সিলেট শহর পার হয়ে অটো ছুটে চলছে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত বিছানাকান্দির উদ্দেশ্যে। সাধারনত যে রাস্তা দিয়ে যান চলাচল করে সে রাস্তা খারাপ হওয়ায় আমাদের অটো চল্লো অণ্য রাস্তা দিয়ে। একটু বেশি সময় লাগলেও সেদিক দিয়ে মোটামটি ভালোই রাস্তা, তার পরেও আধা কি:মি: এর মতো খানা – খন্দক। মাঝপথে অটো চালক আমাদের অনেক দূরে সাদা মেঘের উপর ধূসর রংয়ের কিছু একটা দেখিয়ে বললো, ঐগুলো যা দেখা যাচ্ছে তা আসলে পাহাড়। শুনেতো অবাক, মেঘের এতো উপরে পাহাড় ? । ভালো করে দেখার জন্য অটো থামাতে বললাম।
দুচোখ ভরে দৃশ্য উপভোগ করার চেষ্টায় আমরা যখন বিভোর,তখন ইব্রাহিম ভাই বললো আমরা তো সেখানেই যাব, মানে সেই পাহাড়ের কাছে, এটা শুনে তারাতারি উঠে পরলাম আবার। দূরের সেই পাহাড়গুলো আসলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত। সন্ধ্যায় ঐ পাহাড়ের সৌন্দর্য বেড়ে যায় কয়েকগুন। পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট লাইট আর ছুটে চলা গাড়ি,সব মিলিয়ে অন্যরকম এক দৃশ্য। এভাবে আরো প্রায় বিশ, পচিঁশ মিনিট যাবার পর আমরা পৌছলাম হেদারপার বাজার নামকস্থানে। সেখান থেকে বিছানাকান্দি যেতে হবে ইঞ্জিন চালিত নৌকায়।
তবে মজার বিষয় হলো আমরা তখনো জানতামনা যে অটো থেকে নামার পর ট্রলারে আরো প্রায় এক ঘন্টার পথ পারি দিয়ে তারপর যেতে হবে গন্তব্যে ! শুনে প্রথমে একটু মেজাজ খারাপ হলেও কি আর করা ? এতদূর যেয়ে আর সামান্য একটুর জন্য তো গন্তব্য মিস করা যাবেনা । ইব্রাহিম ভাইকে বললাম তার পরিচিত কোন নৌকা থাকলে বলে দেবার জন্য। আমরা সেখান থেকে হালকা খাবার ও পানীয় সাথে নিয়ে নিলাম। নৌকা রেডি, ইব্রাহিম ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমারা চললাম সেই পাহাড়ের কাছে মানে বিছানাকান্দিতে। পথে নদীর দুই পাশের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার সাথে সাথে চলছে সেলফি ও ছবি তোলার পর্ব।
যেতে যেতে কখনো মনে হচ্ছিল এইতো পাহাড়ের একেবারে কাছে চলে এসেছি, কিন্তু না নদীটা অনেকটাই আঁকা বাঁকা হওয়ায় এমনটা মনে হয় । প্রায় ঘন্টা খানেক নৌকা চলার পর আমরা পৌছলাম। পথে অনেক ইঞ্জিন চালিত নৌকা, কোনটায় ফিরছে পর্যটকরা আবার কোনটায় যাচ্ছে।
নৌকা থেকে নামার পর আমরা মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঝর্নার স্রোতে এতটাই মুগ্ধ যে মুহূর্তেই সব ক্লান্তি কোথায় চলে গেল বুঝতেই পারলাম না।
প্রথমে ভেবেছিলাম শুধু পা ভেজাবো, কিন্তু তা কি আর সম্ভব এতো শীতল পানিতে শুধুকি পা ভেজালে চলে ? বাচ্চারাতো খুশিতে কি করছে তা বলা মুসকিল।
তবে সেখানে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হলো পিচ্ছিল পাথরে সাবধানে পা ফেলতে হবে। শীতল পানিতে ভিজে আর ছবি তুলে কতঘন্টা পার করেছি তা বলতে পারবোনা তবে ফিরতে হবে নৌকার লোক যখন তারা দিলো, তখন বুঝলাম আসলেও ফিরতে হবে। কি আর করা যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তিকে ধুয়ে মুছে কিছু মধুর স্মৃতি নিয়ে এবার ফোরার পালা।