অফিস থেকে ফিরে পেটে একটু ক্ষিদের মোচর লাগলো ঝটপট দু প্যাকেট চিপস খাওয়া, সঙ্গে তেষ্টা মাটাতে ঠান্ডা কোল্ড ড্রিঙ্কস তো আছেই। এমন খাদ্যরসিকদের সংখ্যা মোটেও কম নেই, যাদের দিন শুরু হয় ভাজাভুজি দিয়ে, আর শেষ হয় সেই ভাজাতে এসেই। কিন্তু এমন খাবার বেশি মাত্রায় খাওয়ার কারণে শরীরের ভেতরে কি গোলযোগ হয়, সে বিষয়ে জানা আছে কি আপনাদের? চিকিৎসকেদের মতে চিপস বা ভাজাভাজি জাতীয় খাবরে লবনের পরিমাণ খুব বেশি থাকে। ফলে এমন খাবার বেশি মাত্রায় খেলে শরীরে সোডিয়াম বা লবনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে কিডনি ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। ফলে দেহের অন্দরে পানির পরিমাণ বাড়াতে শুরু করে।
আর এমনটা হওয়া মাত্র একদিকে যেমন রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে, তেমনি অন্যদিকে আরও সব জটিল রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ফলে শরীর এমন ভাঙতে শুরু করে যে আয়ু একেবারে তলানিতে এসে দাঁড়ায়। প্রসঙ্গত, বেশি মাত্রায় চিপস বা ঐ জাতীয় খাবার খেলে সাধারণত যে যে মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেগুলি হল…
১. রক্তচাপ মারাত্মক বেড়ে যায়:
শরীরে লবন বা সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে শুরু করলে দেহে পানির মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে ধমনীর উপর এমন চাপ পরে যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইয়ে চলে যায়। সেই সঙ্গে শরীরের বাকি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের উপরও খারাপ প্রভাব পরে।
২. কিডনি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়:
রক্তে থাকা অতিরিক্ত ফ্লইড শরীর থেকে বার করে দেওয়ার কাজটা করে থাকে কিডনি। আর এই কাজটি করার সময় কিডনি ওসমোসিস নামক বিশেষ এক ধরনের প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে রক্ত থেকে কিছু পরিমাণে পানি ধার নিয়ে ইউরিনের মাধ্যমে সেই অতিরিক্ত ফ্লইডকে শরীর থেকে বাইরে করে দেয়। এখন যখনই কেউ অতিরিক্ত মাত্রায় লবন দেওয়া খাবার খাওয়া শুরু করে, তখন রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে দেহের অন্দরে পটাশিয়াম এবং সোডিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। আর এমনটা হওয়া মাত্র কিডনির উপর মারাত্মক চাপ পরতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে কিডনির কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেই সঙ্গে শরীরে টক্সিক উপাদানের মাত্রাও বেড়ে যেতে থাকে।
৩. আর্টারি ক্ষতিগ্রস্থ হয়:
শরীরে লবনের পরিমাণ বাড়তে থাকলে আর্টারির দেওয়ালে মারাত্মক চাপ পরতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে আর্টারি শক্ত হয়ে যায়। আর এমনটা হওয়া মাত্র রক্তচলাচলের সময় আর্টারির দেওয়ালে চাপ আরও বেড়ে যায়। এক সময় গিয়ে প্রেসার এতটা বেড়ে যায় যে তা সহ্য করতে না পেরে আর্টারি ফেটে যায়। ফলে জীবন সংশয়ের আশঙ্কা দেখা দেয়।
৪. হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হয়:
বেশি মাত্রায় লবন খাওয়ার কারণে রক্ত চাপ বাড়তে থাকলে প্রথমে হার্টে রক্ত সরবরাহকারি আর্টারিগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পৌঁছাতে সমস্যা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিকে চিকিৎসা পরিভাষায় অ্যানিগা বলা হয়ে থাকে। এমনটা হওয়া মাত্র বুকে হালকা চিনচিনে ব্যথা হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে। এরপর যত সময় এগতে থাকে, তত হার্ট দুর্বল হয়ে পরতে থাকে। ফলে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
৫. ব্রেন পাওয়ার কমে যায়:
রক্তচাপ মাত্রা ছাড়ালে হার্টের মতো মস্তিষ্কেও রক্ত চলাচল স্বাভাবিকভাবে হতে পারে না। ফলে রক্তের অভাবে প্রথমে ভাসকুলার ডিমেনশিয়া এবং পরবর্তি সময় স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এবার বুঝেছেন তো সামান্য লবন কিভাবে ধীরে ধীরে আমাদের মৃত্যু মুখে ঠেল দেয়। তাই সময় থাকতে সাবধান হন।