আল মাহমুদ এক সোনালী আকাশ

আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যের আকাশে দেদীপ্যমান নক্ষত্র। এই নক্ষত্রের আকার-আয়তন ও উজ্জ্বলতা এত বেশী যে, পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বের হাজারগুণ দূরত্বে থেকেও দৃষ্টিগোচর হয়। আবার এমনও বলা যায়, তিনি নিজেই বাংলা সাহিত্যের একটি আকাশ, আর সেই আকাশে আলোকরশ্মি ছড়াচ্ছে তাঁর কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছড়া, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কলাম, ভ্রমণ কাহিনী ইত্যাদি। তিনি শুধু বাংলা সাহিত্যকেই সমৃদ্ধ করেননি, বাংলা ভাষাকেও করেছেন ঋদ্ধ, পরিশীলিত, পরিমার্জিত এবং গ্রামীণ চিত্র অবকাঠামো নির্মাণেও দেখিয়েছেন নিজস্ব কৌশল। indezzx

আল মাহমুদের হৃদয় ও সত্তা একে অপরের পরিপূরক; কে হৃদয় আর কে সত্তা চেনা দুঃসাধ্য। সৃষ্টিশীল একটি মানুষ সৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্তার যে কোনো কার্পণ্য থাকে না, আল মাহমুদ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সাহিত্য শব্দের মূল অর্থ চিত্তাকর্ষক রচনা। এই চিত্তাকর্ষক রচনার জন্য উচ্চশিক্ষারও প্রয়োজন পড়ে না, যা আমরা প্রমাণ পেয়েছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুফিয়া কামাল, আহসান হাবীব প্রমুখের সাহিত্যকর্ম থেকে। আল মাহমুদ কাকে কতখানি ছাড়িয়ে গেছেন সে বিতর্কে যাব না, তিনি প্রধান নাকি অপ্রধান সে প্রশ্নও অবান্তর। তিনি একটি সর্ববৃহৎ আকাশে নিজেই একটি বৃহৎ আকাশ হয়ে আছেন এটাই যুক্তিযুক্ত। সাহিত্যের পৃথিবীতে তাঁর মূল্যায়ন কতটুকু হবে জানি না, তবে গাঙের ঢেউয়ের মতো বলো কন্যা কবুল কবুল— এই আহ্বান কবি আল মাহমুদের।

একজন লেখকের অবশ্যই একটি কমিটমেন্ট থাকবে দেশের প্রতি, সমাজের প্রতি, মানুষের প্রতি। এই কমিটমেন্ট রক্ষায় আল মাহমুদ যথেষ্ট সজাগ ছিলেন ও সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়েছেন, যে কারণে তাঁর ধারণা, ইচ্ছা, স্বপ্ন সবকিছু প্রতিফলিত করতে পেরেছেন প্রতিটি লেখায়। সমাজের কোনো কোনো মানুষের কূপমণ্ডকতা, দাম্ভিকতা এতটাই প্রকট থাকে যে, কোনো কোনো মানুষের পক্ষে প্রগতিশীলতার দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে একজন প্রকৃত প্রগতিশীল মানুষ তাঁর ধ্যান-ধারণায় ব্যতিক্রম চিন্তা প্রকাশে উদগ্রীব হয়ে উঠতে পারেন। সমাজ সচেতনতায় এটা অধিক জরুরী হলেও নিন্দুকের কাছে তা ভিন্নার্থ প্রকাশ করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কবি আল মাহমুদ একটি উৎসর্গ দিয়েও বিষয়টি অনেকখানি খোলাসা করেছেন— ‘শামসুর রাহমান, ফজল শাহাবুদ্দীন, শহীদ কাদরী- আমাদের এককালের সখ্য ও সাম্প্রতিক কাব্য-হিংসা অমর হোক।’ আমি বলছি না শামসুর রাহমান, ফজল শাহাবুদ্দীন বা শহীদ কাদরী বিচ্যুত পথে চলেছেন বা আল মাহমুদ নিজেই বিচ্যুত। বলতে চাচ্ছি, প্রত্যেকেরই পথ নিজস্ব আর নিজস্বতা নির্মাণে সকলেই সচেষ্ট। কে কতদূর এগোবে, কীভাবে এগোবে তা তার নিজস্ব সাধনা ও ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু কমিটমেন্টের জায়গাটি থাকতেই হবে, আর সেটি ছিল বলেই এঁরা প্রত্যেকেই স্বহিমায় উজ্জ্বল, বাংলা সাহিত্যে নিজ নিজ আসন দখল করে আছেন।

2013-01-03-14-15-24-50e5927c64387-untitled-10

অনেকেই আল মাহমুদকে জীবনানন্দ দাশ বা জসীমউদ্‌দীনের সঙ্গে তুলনা করেন। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, একজন কবির সঙ্গে অন্য একজন কবির তুলনা করে ছোট-বড় আবিষ্কারের প্রয়াস বাঞ্ছনীয় নয়। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জায়গায় আর কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর জায়গায়। তবে কাউকে মূল্যায়ন করতে হলে তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকর্ম নিয়েই হওয়া উচিত। আল মাহমুদ তাঁর সৃষ্টিশীলতায় যে দক্ষতা দেখিয়েছেন তা অনুভব করতে পেরেছি আমার সতের বছর বয়সে ক্রাউন সাইজের ‘কালের কলস’ বইটি পাঠের মাধ্যমে। ধিক্কারও যে কত সরল হতে পারে ‘সরল ধিক্কার’ না পড়লে জানতাম না ‘ঈগলের বাচ্চা হয়ে কোকিলের মতো চক্ষু তোর/ কী করে রঙিন হলো, এখনো বুঝি না’ (সরল ধিক্কার, কালের কলস)। তার পর তো মনে হলো সব কথা (কবিতা) আমার নিজেরই, ‘অনিচ্ছায় কতকাল মেলে রাখি দৃশ্যপায়ী তৃষ্ণার লোচন/ ক্লান্ত হয়ে আসে সব, নিসর্গও ঝরে যায় বহুদূর অতল আঁধারে/ আর কী থাকলো তবে হে নীলিমা, হে অবগুণ্ঠন/ আমার কাফন আমি চাদরের মতো পরে কতদিন আন্দোলিত হবো/ কতকাল কতযুগ ধরে/ দেখবো, দেখার ভারে বৃষের স্কন্ধের মতো নুয়ে আসে রাত্রির আকাশ?’ (কালের কলস, কালের কলস)।

মানবপ্রেম, দেশপ্রেম কী প্রকৃতিপ্রেম সকল প্রেমের প্রেমিক আল মাহমুদ প্রেমকে উপস্থাপন করেছেন স্বতন্ত্র বিষয়-বৈচিত্র্যে উন্মাতালভাবে। ভাষাশৈলী ও নির্মাণশৈলীতে নিপুণ কারিগর তাঁর স্বকীয়তা দিয়ে আকৃষ্ট করতে পেরেছেন সাহিত্যামোদী পাঠককে। গ্রামীণ শব্দকে কখনো শহুরে ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছেন যা সর্বজনীন হয়েছে যেমন ‘ঠিল্লা ভরা পানি’ ঠিকই কলসী ভরা পানিতে রূপান্তরিত হয়েছে পাঠকের হৃদকমলে। উচ্চারণটা সব সময়ই থেকেছে তেজস্বী। কোনোকিছু জানান দেওয়ার আগে ভূমিকা এত স্পষ্ট হয়েছে যে, পাঠক তা জানার কৌতূহল বোধ করবেই। বিশেষ করে ‘কাবিলের বোন’ উপন্যাসে আমরা এমন চিত্র বেশী দেখতে পেয়েছি। উপমহাদেশ অতিক্রম করতে হলে বার বার পাঠ করতে হয়। গদ্য সাহিত্যে আল মাহমুদ একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। পানকৌড়ির রক্ত পড়ে আমি অভিভূত হয়েছি। পাখির রক্তের সঙ্গে স্ত্রীর নিয়মতান্ত্রিক রক্তের উপমা সৃষ্টি অনবদ্য। জলবেশ্যা গল্পটি সামাজিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিকটিও তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। তাঁর প্রতিটি গল্পে যেন জীবনের প্রতিচ্ছবি সমাজের অবিচ্ছেদ্য চিত্র আর রূপকাশ্রিত মাত্রায় প্রাণ পেয়েছে গল্পে সৃষ্ট চরিত্রগুলো। তাঁর লেখায় প্রতিটি বাক্যই যেন সাহিত্যাশ্রয়ী। কাবিলের বোন উপন্যাস থেকে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক, ‘রোকসানা কোনো জবাব না দিয়ে চুপচাপ জানালার ওপাশে দেয়ালের কাছে ক্রমাগত ফুটতে থাকা সন্ধ্যা মালতীর ঝোপের ওপর চোখ রেখে বসে থাকল। ঘরের ভেতর থেকে আলোর ঝাপটা গিয়ে লাগছে ঝোপটায়। ফোটা ফুলগুলোর রংয়ের মধ্যে কোনো উগ্রতা নেই। যদিও ফুলগুলো দেখতে এক ধরনের লালই বলা যায়।’ (পৃষ্ঠা-১৩৮)।

কালের কলস পাঠের ৬ বছর পর ১৯৮৫ সালে মফস্বল শহর থেকে ঢাকা আসার পর সোনালী কাবিন পাঠের সুযোগ হয়। ভাললাগা আর ভালবাসা থেকে সোনালী কাবিন শিরোনামের কবিতাটির ১৪ পঙ্‌ক্তিবিশিষ্ট ১৪টি পর্ব পুরোটাই মুখস্থ করে বন্ধুদের কাছে শোনাতাম। তারাও এই বইটির প্রেমে পড়ে যায় এবং সংগ্রহ করতে থাকে। আর আমার হৃদয়ে আল মাহমুদ নামটি লেখা হয়ে যায় অদৃশ্য অক্ষরে। একে একে পড়ে ফেলি ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’, ‘অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না’ ও ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’। অনেক কষ্টে সংগ্রহ করি ‘লোক লোকান্তর’। এর পর প্রতীক্ষা করি কবে কখন আল মাহমুদের কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হবে। ১৯৮৭ সালে ‘আরব্য রজনীর রাজহাঁস’, পরের বছর ‘প্রহরান্তের পাশফেরা’, তার পরের বছর ‘একচক্ষু হরিণ’, ১৯৯৩ সালে ‘মিথ্যাবাদী রাখাল’, পরের বছর ‘আমি, দূরগামী’ প্রকাশিত হয় এবং প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বইগুলো ক্রয় করি, পাঠ করি ও প্রিয় কবিতাগুলো মুখস্থ করি। ব্যক্তিগত কারণে এ সময় থেকে আমার লেখালেখি ও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। কার কোন বই বের হল বা কে কী লিখছেন তার খোঁজ রাখা হয় না। ২০০৬ সালে জানলাম অনন্যা থেকে আল মাহমুদের কবিতাসমগ্র-২ প্রকাশিত হয়েছে। বইমেলায় গিয়ে বইটি ক্রয় করতেই দেখি পাশে স্বয়ং আল মাহমুদ। আগ্রহভরে বই কেনার ভঙ্গিটি দেখে তিনি মৃদু মৃদু হাসছেন। বইটি তাঁর দিকে মেলে ধরলে তিনি আমার নামের বানানটি জেনে নিয়ে শুদ্ধ করে লিখে অটোগ্রাফ দিলেন ১৯.০২.০৬ তারিখে।al-mahmud-thereport24

দেখলাম, এতদিনে তাঁর বেশ কয়েকটি কাব্য প্রকাশিত হয়ে গেছে— ‘দ্বিতীয় ভাঙন’, ‘নদীর ভিতরে নদী’, ‘উড়ালকাব্য’, ‘বিরামপুরের যাত্রী, ‘না কোনো শূন্যতা মানি না’ ‘তোমার জন্য দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী’, ‘বারুদগন্ধী মানুষের দেশ’ এবং এ ছাড়াও রয়েছে ‘অনূদিত কবিতা’। এগুলোর আগে অবশ্য ‘দোয়েল ও দয়িতা’ নামে একটি কাব্য প্রকাশিত হয়েছে যেটা কবিতাসমগ্রে পড়ার সুযোগ হয়েছে। এই বইগুলো আমাকে আলাদা করে কিনতে হয়নি। একটা নির্ভেজাল সত্য যে, আমি আল মাহমুদ-এর কবিতা যে আবেগ-অনুভূতি দিয়ে পাঠ করেছি তা অন্য কোনো কবির বেলায় সম্ভবপর হয়নি। জানি না কেন? যেখানে তাঁর যে কবিতাটি পেতাম মন দিয়ে পড়তাম এবং ভাললাগলে রাত জেগে সেটা মুখস্থও করে ফেলতাম। একটি ঘটনা বলি। ১৯৯৫ সালের কথা। একদিন সন্ধ্যার পর কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা দফতরে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের কাছে গিয়েছি। দাদাভাই তাঁর টেবিলে থাকা পাক্ষিক শৈলী পত্রিকাটি আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, এটা দেখেছ? কায়সুল হক সম্পাদিত শৈলী পত্রিকাটি তখন সাহিত্যমহলে বিশেষ সাড়া ফেলেছে। বললাম, দেখেছি। তিনি বললেন, দেশে এখন খরা চলছে তা নিয়ে আল মাহমুদ একটি চমৎকার কবিতা লিখেছেন, পড়েছ? আমি বললাম, হ্যাঁ পড়েছি— খরা। গত রাতে মুখস্থ করা কবিতাটি দাদাভাইকে শোনালাম, ‘নদীর মরণ দেখে তোমাকেই জীবনের জল হতে বলি/ বসন উদ্ভিদ হোক, অলঙ্কার শৈবাল যেমন।/ একভাগ মাংসমেদ তিন ভাগ রক্তের অঞ্জলি,/ এরি মাঝে স্নানপান প্রক্ষালন, বাঁচার বেদন।/ তোমাকেই পান করি।…’ পুরো কবিতাটি শোনালে দাদাভাই কিছুক্ষণ নিষ্পলক আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। আল মাহমুদকে নিয়ে অনেক কথা হল তাঁর সঙ্গে। বছর দু’য়েক আগে নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক পেয়েছেন আল মাহমুদ— সে বিষয়েও কথা হল। বাংলা একাডেমি পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন বেশ অল্প বয়সে।

এতক্ষণ কবিতা আর গদ্য নিয়ে আল মাহমুদ সন্ধান করেছি। এবার শিশুসাহিত্যে আসা যাক। আমার জানামতে আল মাহমুদ শিশুদের জন্য অনেক কম লিখেছেন। পরিমাণে কম লিখলেও মানের দিক থেকে এতটা উৎরে গেছেন যে, শিশুসাহিত্যেও আল মাহমুদ নামটি সংযুক্ত থাকবে চিরকাল। রোকনুজ্জামান খানও অবশ্য কম পরিমাণ লিখে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক (সাংবাদিকতায়) পেয়েছেন। সুতরাং আল মাহমুদ আমাদের শিশুসাহিত্যে অনেকখানি জায়গা দখল করে থাকবেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমী থেকে প্রকাশিত শিল্পী হাশেম খানের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ ও অলংকরণে শোভিত তাঁর ‘পাখির কাছে ফুলের কাছে’ বইটি বহুবার পড়েছি। কিশোর কবিতা পড়তে গেলে মনে হয়েছে সেখানে একটি সম্পূর্ণ গল্প রয়েছে, যেমন— ‘নারকোলের ঐ লম্বা মাথায় হঠাৎ দেখি কাল/ ডাবের মতো চাঁদ উঠেছে ঠাণ্ডা ও গোলগাল।/ ছিটকিনিটা আস্তে খুলে পেরিয়ে গেলাম ঘর/ ঝিমধরা এই মস্ত শহর কাঁপছিলো থরথর।’ অথবা ‘আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে/ হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।/ নদীর কাছে গিয়েছিলাম, আছে তোমার কাছে?/ —হাত দিও না আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে।’ অথবা ‘সবাই ঘুমিয়ে গেল রাত দুপুরে/ চুপিসারে চলে এসে খোলো জানালা,/ নিশীথের নিরালা নীল মুকুরে/ দেখো দেখো, ভেসে যায় সোনার থালা। ইত্যাদি। ঊনসত্তরের ছড়ায় তো রীতিমতো চমক আর মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন আল মাহমুদ— ট্রাক! ট্রাক! ট্রাক!/ শুয়োরমুখো ট্রাক আসবে/ দুয়োর বেঁধে রাখ।’ একটি ট্রাক যখন শুয়োরমুখো করে ফেলা হয় তখন আর দানবীয় রূপের পরিচয় দিতে হয় না, ট্রাকের চিত্রটা আঁকলেই স্বাধীনতা-পরাধীনতার চিত্রটা পরিস্ফুট হয়। ট্রাকের মুখে আগুন দিতে মতিয়ুরকে ডাকা মানে হারানোর শোক সামলানো এবং অন্য কোনো মতিয়ুরকে সোনামানিক সম্বোধনে আহ্বান করা। এই চিত্রকল্প আল মাহমুদের পক্ষেই সম্ভব।

আল মাহমুদ যা সৃষ্টি করেছেন, বাংলা সাহিত্য ও বাঙালী জাতি যতদিন থাকবে ততদিন তাঁর নাম অমর, অব্যয়, অক্ষয় থাকবে। লেখাটির শুরুতে তাঁকে আকাশের সঙ্গে তুলনা করেছিলাম। তিনি তাঁর লেখাতে যে দ্যোতনা, যে ব্যঞ্জনা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তাতে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, প্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্ব পালন করেছেন। সাহিত্যের অন্তরীক্ষে একজন আল মাহমুদ এত সোনার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন যে, আলোগুলো সোনালী রং ধারণ করে সর্বক্ষণ ঝলমল করছে। এই আলোর বিচ্ছুরণে আমরা পরিপ্লুত।

কবি আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ৮০তম জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁকে জানাচ্ছি প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। প্রার্থনা করি তিনি দীর্ঘজীবী হোন এবং আমাদের জন্য আরও চমৎকার লেখা উপহার দিন।

লেখক :

স. ম. শামসুল আলম

গবেষক ও প্রাবন্ধিক

The Report24.com থেকে সংগ্রহীত

আরো কিছু পোস্টঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *