

আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যের আকাশে দেদীপ্যমান নক্ষত্র। এই নক্ষত্রের আকার-আয়তন ও উজ্জ্বলতা এত বেশী যে, পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বের হাজারগুণ দূরত্বে থেকেও দৃষ্টিগোচর হয়। আবার এমনও বলা যায়, তিনি নিজেই বাংলা সাহিত্যের একটি আকাশ, আর সেই আকাশে আলোকরশ্মি ছড়াচ্ছে তাঁর কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছড়া, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কলাম, ভ্রমণ কাহিনী ইত্যাদি। তিনি শুধু বাংলা সাহিত্যকেই সমৃদ্ধ করেননি, বাংলা ভাষাকেও করেছেন ঋদ্ধ, পরিশীলিত, পরিমার্জিত এবং গ্রামীণ চিত্র অবকাঠামো নির্মাণেও দেখিয়েছেন নিজস্ব কৌশল।
কালের কলস পাঠের ৬ বছর পর ১৯৮৫ সালে মফস্বল শহর থেকে ঢাকা আসার পর সোনালী কাবিন পাঠের সুযোগ হয়। ভাললাগা আর ভালবাসা থেকে সোনালী কাবিন শিরোনামের কবিতাটির ১৪ পঙ্ক্তিবিশিষ্ট ১৪টি পর্ব পুরোটাই মুখস্থ করে বন্ধুদের কাছে শোনাতাম। তারাও এই বইটির প্রেমে পড়ে যায় এবং সংগ্রহ করতে থাকে। আর আমার হৃদয়ে আল মাহমুদ নামটি লেখা হয়ে যায় অদৃশ্য অক্ষরে। একে একে পড়ে ফেলি ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’, ‘অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না’ ও ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’। অনেক কষ্টে সংগ্রহ করি ‘লোক লোকান্তর’। এর পর প্রতীক্ষা করি কবে কখন আল মাহমুদের কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হবে। ১৯৮৭ সালে ‘আরব্য রজনীর রাজহাঁস’, পরের বছর ‘প্রহরান্তের পাশফেরা’, তার পরের বছর ‘একচক্ষু হরিণ’, ১৯৯৩ সালে ‘মিথ্যাবাদী রাখাল’, পরের বছর ‘আমি, দূরগামী’ প্রকাশিত হয় এবং প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বইগুলো ক্রয় করি, পাঠ করি ও প্রিয় কবিতাগুলো মুখস্থ করি। ব্যক্তিগত কারণে এ সময় থেকে আমার লেখালেখি ও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। কার কোন বই বের হল বা কে কী লিখছেন তার খোঁজ রাখা হয় না। ২০০৬ সালে জানলাম অনন্যা থেকে আল মাহমুদের কবিতাসমগ্র-২ প্রকাশিত হয়েছে। বইমেলায় গিয়ে বইটি ক্রয় করতেই দেখি পাশে স্বয়ং আল মাহমুদ। আগ্রহভরে বই কেনার ভঙ্গিটি দেখে তিনি মৃদু মৃদু হাসছেন। বইটি তাঁর দিকে মেলে ধরলে তিনি আমার নামের বানানটি জেনে নিয়ে শুদ্ধ করে লিখে অটোগ্রাফ দিলেন ১৯.০২.০৬ তারিখে।
- শের-ই-বাংলার সাথে মোলাকাত
- বাংলাদেশের অনিন্দ্য সুন্দর ঝর্ণা