baobaasবাওবাব গাছ। আফ্রিকার শুষ্কতম অঞ্চল থেকে মধ্য আফ্রিকার প্রায় সব দেশেই এ গাছের দেখা মেলে। বাওবাব গাছের পাতা তাজা অবস্থায় আবার শুকিয়েও খাওয়া যায়। কচি পাতায় শতকরা ৪ ভাগ প্রোটিন থাকে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, বাওবাব ফলে একটি কমলালেবু অপেক্ষা ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।

বাওবাব ফলে যে চিনি ও পেকটিন থাকে তা দিয়ে কোমল পানীয় তৈরি হয়। একে চকোলেট ও আইসক্রিমের সুগন্ধি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। কেউ কেউ চায়ের মতো করে বাওবাবের বিচির গুঁড়া খেয়ে থাকেন। বাওবাব গাছের শুকনো শিকড়ের গুঁড়ো পানিতে ভিজিয়ে ম্যালেরিয়া রোগের ওষুধ, বাকলের আঠা দিয়ে খোসপাঁচড়া ও ঘায়ের ওষুধ তৈরি হয়। এছাড়া এ গাছের আঁশযুক্ত ছাল দিয়ে উৎকৃষ্ট মানের রশি ও সুতা বানানো হয়। স্থানভেদে একটি বাওবাব গাছ ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর দৈত্যাকার গুঁড়ির ব্যাস হতে পারে ১০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত। আধুনিক কার্বন এক্স-

রে পদ্ধতিতে প্রমাণিত হয়েছে যে একটি বাওবাব গাছ ৩ হাজার বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। আফ্রিকায় প্রাচীন একটি বাওবা গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে, যার ফাঁপা গুঁড়ির ভেতরে প্রায় ৪০ জন মানুষ একসঙ্গে ঢুকতে পারে। বাওবাবের বিশাল গুঁড়ির খোলসে দোকান বসানো যায়, বসবাসের জন্য ঘর বানানো যায়, এমনকি অনেকে এর গুঁড়ির ভেতরে গাড়ি রাখার গ্যারেজ পর্যন্ত করে থাকেন।baw

স্থানীয় ভাষায় এই গাছের অন্যান্য অর্থবোধক নাম – বাওব, বোও

বোয়া, বোতল বৃক্ষ, উল্টা বৃক্ষ এবং মাঙ্কি ব্রেড বৃক্ষ। কথিত আছে কিছু বাওবাব গাছের বয়স কয়েক হাজার বছর। যেহেতু গাছগুলোর কাণ্ডে কোনও বর্ধন-বলয় থাকে না, তাই গাছগুলোর বয়স যাচাই করা কঠিন। অবশ্য যদিও কার্বন-১২ পরীক্ষণ পদ্ধতিতে এর গাছগুলোর বয়স নির্ণয় করা সম্ভব। রেডিওকার্বন-এর বয়স নির্ণয় পদ্ধতি ব্যবহার করে, সব থেকে পুরানো গাছটির বয়স প্রায় ৬০০০ বছর অনুমান করা হয়েছে। এই বিচারে এই গাছটি পিড়ামিড থেকেও পুরানো এবং যিশু খ্রিষ্টের জন্মের কয়েক হাজার বছর আগে এই গাছটি জন্মেছিল। খামারের মালিক এই গাছটির ভিতরের ফাঁপা অংশে একটি পাব বানিয়েছে।

ma

মূলত শুষ্ক অঞ্চল বা কম অথবা সামান্য বৃষ্টিপাত হয়, সেখানে এই গাছ বেঁচে থাকতে পারে। জলাবদ্ধ জায়গায় এই গাছ জন্মে না। বন্যা, খরা, বজ্রপাত-প্রধান এলাকায় এই গাছ বেশিদিন বাঁচে না। প্রাণীকূলের ভিতরে হাতি এই গাছের ক্ষতি করে। এছাড়া এক ধরনের কালো ফাঙ্গাস এই গাছের মৃত্যু ঘটায়। এই সকল প্রতিকূল পরিবেশ অতিক্রম করে একটি গাছ যদি প্রায় ৮০০ বৎসর টিকে থাকতে পারে, তাহলে এই গাছের প্রকৃত রূপ দেখতে পাওয়া যায়। অন্যান্য গাছের মতো এই গাছের সবগুলোর গড়ন একই রকম হয় না। প্রজাতিভেদে এবং আঞ্চলিক পরিবেশের এই গাছ অদ্ভুদ সব আকার পায়।

baobab-toiletএই গাছগুলোর কাণ্ড প্রকাণ্ড মোটা এবং ফাঁপা হয়। এই গাছের অভ্যন্তরে পানি ধরের রাখার ক্ষমতা অনেক বেশি। কোনো কোনো গাছ তার কাণ্ডের ভিতর ১২০,০০০ লিটার পানি ধরে রাখতে পারে।

এই গাছের ফল প্রায় ১৮ সেমি লম্বা হয় এবং কমলার থেকে বেশী পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। শুকনো ফলের পাল্প, বীচি থেকে আলাদা করে দুধের সাথে মিশিয়ে অথবা সরাসরি খাওয়া হয়। মালাউইতে এই ফলের পাল্প থেকে জুস বানানো হয়। স্যুপ ঘন করার জন্য এই ফলের বীজ ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া ভাজা বীজ সরাসরি খাওয়া যায়। এর বীজ থেকে তেল উৎপন্ন হয়। তন্তুর উৎস, রং তৈরীতে বা জ্বালানি হিসেবেও এই গাছের ব্যবহার হয়। তাঞ্জানিয়ায় এই গাছের পাল্প আখ থেকে বিয়ার তৈরীতে চোলাইকরণের জন্য ব্যবহার হয়। bawba

মালাউই, জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে, সাহেল-সহ আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে এই গাছের পাতা সব্জি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাতা টাটকা ও শুকনো গুড়ো দুই ভাবেই খাওয়া যায়ে। উত্তর নাইজেরিয়ায় এই পাতা স্থানীয়ভাবে কুকা নামে পরিচিত এবং কুকা স্যুপ তৈরীতে ব্যবহার করা হয়।

bawbজাপানের পেপসি কোম্পানি বাওবাব ব্যবহার করে ‘বাওবাব-পেপসি’ নামে সীমিত-সংস্করণে টক স্বাদযুক্ত কার্বনেটেড পেপসি উৎপাদন করেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ছাড়পত্র না পাওয়ায় সেখানে গোটা ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু শুকনো ফলের পাল্প সীমিত আকারে স্মুদি ও সেরিয়াল-এর খাদ্যোপাদান হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দিয়েছে। আফ্রিকার বাইরে এই ফলের ব্যাপক ব্যবহার হয় না।

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের সাভানুর-এ ৩টি এই গাছ আছে। এদের বয়স আনুমানিক ৫০০০ বছর এবং পরিধি ১৪-১৮মিটার।
১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে van Heerdens একটি গাছের মাঝখানের ফাঁকা অংশ পরিষ্কার করেন। তখন তিনি অনুমান করেছিলেন একসময় ভারতীয় বুশম্যানরা হয়তো এখানে বাস করতো।

আরো কিছু পোস্টঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *