অসীম রহস্যের ব্লাক হোল

আমাদের এ মহা বিশ্ব সৃষ্টি হয় আনুমানিক সারে তের বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাঙ এর মাধ্যমে । বিগ ব্যাঙ এর ধারনাটা অনেক টা এরকম- মহা বিশ্ব জন্মের আগে খুবই কম আয়তনের এবং বেশি ঘনত্বের এবং অনেক বেশি তাপমাত্রার ক্ষুদ্র একটি বস্তু ছিল যাতে বিষ্ফোরণ ঘটে এবং সেই বিষ্ফোরনের মাধ্যমে নক্ষত্ররাজী, গ্রহ উপগ্রহ ইত্যাদির সৃষ্টি হয় এবং দিন দিন এই মহা বিশ্ব সম্প্রসারিতই হচ্ছে। কুইন মেরী বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ণাড কার ও ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের এলান কলে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হন যে এই বিগ ব্যাঙ এর আগেও অন্য কোন মহাবিশ্বের উপস্থিতি ছিল। সেখানকার ব্লাক হোল অন্য কোন বিগ ব্যাঙ এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে যা আমাদের মহাবিশ্বের চেয়ে পুরানো।

blackhole
তারা বিগ ব্যাঙ এর আগের অবস্থার নাম দেন বিগ ক্রাঞ্চ এবং বিগ ক্রাঞ্চের আগে মহা বিশ্বের অবস্থা কি ছিল তা অবশ্য বলতে পারেন নি।মহা বিশ্বের সবচেযে বড় রহস্য, সবচেযে বড় মহাজাগতিক বিস্ময়, ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর।ব্ল্যাক হোল হলো আমাদের সূযের মত এক ধরনের নক্ষত্র। কোন নক্ষত্রের যদি অনেক ভর ও ঘনত্ত্ব থাকে, তাহলে তার মহাকর্ষীয় শক্তি এতই শক্তিশলী হবে যে আলো পর্যন্ত সেখান থেকে নির্গত হতে পারবে না। এ মহাবিশ্বের যেকোন দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষন তাই হচ্ছে মহাকর্ষীয় শক্তি। এই নক্ষত্রের থেকে আলো কিছু দূর যাওয়ার আগেই নক্ষত্রটির মহাকর্ষীয় আকর্ষন দারা তাকে পিছনে নিয়ে আসে। পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই কৃষ্ণ গহ্বর সম্পর্কে এ পর্যন্ত জানতে পেরেছেন সামান্যই। তবে যতটা তথ্য উদ্ধারে সক্ষম হয়েছেন তা যথার্থই অভাবনীয়, সাধারণ চিন্তার বাইরে।
জন্ম ঃ নক্ষত্র যখন তার জ্বালানি পুড়িয়ে শেষ করে ফেলে তখন নক্ষত্র গুলো সংকুচিত হতে থাকে। সাধারনত গ্যালাক্সি গুলোর মাঝে অবস্থানরত বড় বড় নক্ষত্র তাদের বিবর্তনের সর্বশেষ পরিণতিতে সুপারনোভা বিস্ফোরনের মাধ্যমে ব্ল্যাক হোল সৃষ্টি করে।নক্ষত্র গুলো অনেক বেশি সংকুচিত হয়েই ব্ল্যাক হোলের জন্ম দেয়। কিন্তু সেই সংকুচিত হওয়ার মাত্রা কতটুকু? তা শুনে অবাক হবেন। উদাহরণস্বরূপ, সূর্যের ব্যাসর্ধ প্রায় ৬.৯৬০০০০০কিলোমিটার। এই বিশালাকার আয়তনকে যদি কোনোভাবে মাত্র ১০ কিলোমিটারে(!) নামিয়ে আনা যায়, তাহলে সেটি একটি ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে। আর আমাদের পৃথিবীকেই যদি চেপেচুপে মাত্র দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার(!) বানানো যায়, তাহলে পৃথিবীও একটি ক্ষুদে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হতে পারে। ব্ল্যাক হোল হওয়া তাহলে সোজা ব্যপার না তাই না?
ব্ল্যাক হোল থেকে আলো কিছু দূর যাওয়ার আগেই ব্ল্যাক হোলটির মহাকর্ষীয় আকর্ষন দ্বারা তাকে পিছনে নিয়ে আসে।
আকর্ষন করার ক্ষমতার এলাকাঃ যেহেতু আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না তাহলে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ত কিভাবে দেখা যায় বা বুঝা যায়? মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে, অনেক সময়েই মহাকাশে প্রচুর তারকারাশি দেখা যায় যারা একটি বিশেষ বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে অথবা সর্পিলাকার গ্যাসীয় বস্তু দেখা যায় যা কোন বিন্দুকে কেন্দ্র করে অবস্থান করছে। এই বিশেষ বিন্দুগুলোই হল ব্ল্যাক হোল যেগুলোকে দেখা যাচ্ছে না ঠিকই কিন্তু তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে তারকারাশি বা গ্যাসীয় বস্তুগুলোর অবস্থান আর তাদের গতি-প্রকৃতির মাধ্যমে।
ব্লাক হোল সংঘর্ষ ঃ অতিমাত্রায় কৃষ্ণকায় হওয়ার দরুণ ব্ল্যাক হোল আমাদের কাছে অদৃশ্য বটে কিন্তু এর থেকে নিঃসরিত বিকিরণ জনিত শক্তি প্রতিনিয়তই নির্ণেয়মান। ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে এখনো বিজ্ঞানিরা অনেক কিছু জানতে পারে নি। তাই এটি এখনো রহস্য।

আরো কিছু পোস্টঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *