(সর্তীথ রহমান )

ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুসারে এ দেশকে ছয়টি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে।এগুলো হলো গ্রীষ্ম, র্বষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত । তবে সকল ঋতুর প্রভাব ও প্রাধান্য এক রকম নয়। গ্রীষ্ম, র্বষা ও শীত এ তিনটি ঋতুই এ দেশের প্রকৃতি ও জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের ঋতু চক্রে শীত ঋতুর বৈশিষ্ট অন্য পাঁচটি ঋতু থেকে সর্ম্পূণ আলাদা। কনকনে হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে আসে শীতকাল। হেমন্তের পরে ও বসন্তের আগে শীত ঋতুর অবস্থান। পৗেষ ও মাঘ এ দু’মাস শীতকাল হলেও এর শুরু কিছুটা আগেই এবং সমাপ্তিও ঘটে আরো কিছুটা পর। অর্থাৎ শীতের আগে হেমন্তের শেষের দিকটায় কিছুটা শীত অনুভূত হয় আর শীতের পরে বসন্তের শুরুতেও কিছুটা শীত থাকে। হেমন্তের ফসল উঠে যাওয়ার পরে প্রকৃতিতে যে শূন্যতা, তার মাঝেই শীতের অবস্থান।sit

হেমন্ত ঋতুর পর ঠান্ডা আমেজ মাখা উত্তরে হাওয়া শীতকালের আগমনী র্বাতা ঘোষণা করে। শুষ্ক শীতল চেহারা নিয়ে আসে শীতঋতু। হিমেল আবরণ টেনে উপস্থিত হয় শীত তার চরম শুষ্কতার রূপ নিয়ে। নির্মম রুক্ষতা, পরিপূর্ন রিক্ততা ও বিষাদের প্রতিমূর্তী হলো শীতঋতু। শাল, সেগুন, আমলকী, জামরুল, কৃষ্ণচূড়া শরিষের বনে লাগে হিমেল হাওয়ার ছোঁয়া। বাতাসে বাতাসে রিক্ততার সুর বেজে ওঠে।ভোররে প্রকৃতি তখন ঘন কুয়াশার ধবল চাদরে ঢাকা থাক।ে উত্তররে হমিলে হাওয়ায় হাড়ে কাঁপন লাগয়িে শীত এসে জঁেকে বস।ে সমগ্র প্রকৃতি তখন শীতরে দাপটে নর্জিীব হয়ে যায়। শীতরে শুষ্কতায় অধকিাংশ বৃক্ষলতা পত্র-পল্লবহীন হয়ে পড়।ে যসেব গাছরে পাতা ঝরে পড়ে না সগেুলো বর্বিণ হয়ে যায়। সবুজ প্রকৃতি রুক্ষ র্মূতি ধারণ কর।ে এসময় পাতাহীন গাছরে ডালগুলো কঁেদে ওঠে বুক ফাটা হাহাকার।ে একটা উদাস সুর বাজে প্রকৃততি।ে মনে হয় প্রকৃতি যনে মৃত্যুশয্যা গ্রহণ করছ।ে শীতরে প্রকৃতকিে মনে হয় ঝমিয়িে পড়া প্রকৃত।ি
শীতরে র্দীঘ রজনীতে মানুষ লপে, কাঁথা, কম্বল মুড়ি দয়িে জড়াজড়ি করে কাটায়। পাখরিা র্সূয ওঠার আগে তমেন ডাকে না। তখন দনি ছোট হয়ে পড়।ে সুদূর দক্ষণি থকেে র্সূয করিণ দতিে থাকে এবং দনিরে চয়েে রাত বড় হয়ে যায়। ধীরে ধীরে শীতরে প্রকোপ বাড়তে থাক।ে প্রচ- ঠা-ায় যনে সারাদশে কাঁপতে থাক।ে প্রচ- শীত প্রকৃততিে বরিূপ প্রভাব ফলে।ে তীব্র শীতরে কারণে স্বাভাবকি কাজর্কমে ব্যাঘাত ঘট।ে ফলে জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়।ে শীতকালে কারো গায়ে বাহারী রংয়রে শাল, জাম্পার, জকেটে, সোয়টোর, আলোয়ান, চাদর, কারো গলায় মাফলার, কারো মাথায় গরম টুপি পরতে দখো যায়। গ্রামরে খটেে খাওয়া মানুষ তীব্র শীত উপক্ষো করইে কাজে বরে হয়। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতরে সকালে কৃষক লাঙ্গল-জোয়াল কাঁধে নয়িে মাঠে চলে যায়। কউে জমি চাষ কর।ে কউে ক্ষতেে নড়িানি দয়ে। কষিাণবধূরা শয্যা ত্যাগ করে গৃহস্থালরি বভিন্নি কাজে হাত দয়ে।
শীত মৗেসুমে সমস্ত গাছপালা শুষ্ক এবং বর্বিণ হতে থাক।ে শীতরে রুক্ষতা এবং নর্মিমতায় সমস্ত প্রকৃতি বধ্বিস্ত হয়ে পড়।ে উত্তর দকি থকেে আসে হাড় কাঁপানো শীত। আসে শত্যৈ প্রবাহ। এ সময় তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক হারে নমেে যায়। শীতরে হাত থকেে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ প্রাণান্ত প্রচষ্টো চালায়। যার যটেুকু সাধারণ ও গরম কাপড় আছে তাই গায়ে জড়য়িে শীতরে মোকাবলো কর।ে দরদ্রি মানুষ বশিষে করে শশিু ও বৃদ্ধদরে এ সময় কষ্টরে সীমা থাকে না। গরম কাপড়রে অভাবে এ সময় বহু মানুষ কষ্ট পায়, অনকেরেই মৃত্যু ঘট।ে
শীতে পাকা ফসল ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত হয় গ্রামবাসী। এসব দৃশ্য থকেে চোখ ফরোনো যায় না। হীমর্শীণ পৗেষে বাংলার নদী-নালা, খাল-বলি, পুকুর, জলাশয়গুলো শুকয়িে যায়। তখন এদশেে বৃষ্টপিাত হয় না বললইে চল।ে ফলে রবশিস্যরে চাষাবাদরে জন্য প্রকৃতি হয় অনুকূল। শীতরে শুকনো মাঠও রবশিস্যরে প্রার্চুযে র্পূণ হয়ে ওঠ।ে শীতকালীন টাটকা শাক সবজতিে ভরে যায় বাংলার মাঠ ঘাট প্রান্তর। পালংশাক, নতুন আলু, বাঁধাকপ,ি ফুলকপ,ি শীম, লাউ, টমটেো, গাজর, শালগম, মূলা, লালশাক প্রভৃতি শীতকালীন শাকসবজি আমাদরে খাবারকে আর্কষণীয় কর।ে সরষিা ফুলরে শোভা বাংলাদশেরে প্রকৃতকিে শুষ্কতার মাঝওে এক অপরূপ সাজে সজ্জতি কর।ে অনকে সময় অতরিক্তি কুয়াশা ও শত্যৈ প্রবাহ রবশিস্যরে ক্ষতি কর।ে ক্ষতেরে ফসল নষ্ট হয়। ফলে প্রয়োজনীয় খাদ্যে টান পড়।ে দখো দয়ে খাদ্যাভাব। জনিসিপত্ররে দাম বড়েে যায়। মানুষ হয়ে পড়ে অনন্যোপায়। র্দুভোগরে শষে সীমায় নমেে আসে মানুষরে জীবন। শীতকালে রং বরেঙরে বাহারি গোলাপ, র্সূযমুখী, ডালয়িা, গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা, অতসী, চামলেী, জুঁই, বলেী, বকুল প্রভৃতি ফুল প্রকৃতকিে সুরভতি কর।ে শীতরে ফল কমলালবেু।
পল্লী এলাকায় শীতরে সকালরে দৃশ্য বড় চমৎকার। ছলেমেয়েরো অপক্ষোয় থাকে কখন র্সূয উঠব।ে শীতরে সকালরে সবচয়েে কাঙ্ক্ষতি জনিসি র্তীযক রোদ। সকাল বলোর মষ্টিি রোদে বসে বয়স্ক ও অল্পবয়সী ছলেমেয়েরো রোদ পোহায়। এ সময় ছলেমেয়েদেরে কোঁচড়ে থাকে চড়িা, নাড়ু, মুড়ি ও খজেুররে পাটালি গুড়। চাদর গায়ে দয়িে রোদে বসে গুড়, মুড়,ি খচিুড়ি ও ভাপাপঠিা খতেে খুব ভাল লাগ।ে শীতরে রোদ্দুর বাঙালরি কাছে যর্থাথই তৃপ্তকির। শীতরে সকালে ও রাতে ভাসমান ছন্নিমূল জনগোষ্ঠী আগুন জ্বালয়িে শীত নবিারণ কর।ে কাগজ, খড়, পাটকাঠ,ি পাতা, ধানরে চটিায় (তুষ) আগুন দয়ো হয়। আগুনরে চারপাশে জড়ো হয় লোকজন। বশিষে করে বৃদ্ধ ও শশিুরা আগুনরে চারপাশে ভড়ি জমায়। একই সঙ্গে চলে গল্পগুজব। শীতরে সকালে পাওয়া যায় খজেুররে রস। গাছরিা কলসি ভরে মষ্টিি খজেুর রস নামায়। সইে রস থকেে তরৈি হয় গুড়। শীতরে সকালে খজেুর রস আর গুড়রে মষ্টিি গন্ধ দুই-ই মন কাড়।ে খজেুর রসরে পায়সে খতেে দারুণ লাগ।ে খজেুররে মষ্টিি রস, টাটকা শাকসবজি ও রকমারি পঠিায় গ্রামীণ জীবন হয় উপভোগ্য।
শীতকালে শহরাঞ্চলরে মানুষ সাধারণত অনকে রাত র্পযন্ত জগেে থাক।ে নগরবাসী গভীর রাতে ঘুমুতে যায়। বছিানা ত্যাগ করে অনকে বলো কর।ে তবে যাদরে না বরেুলইে নয়, তারা ঘন কুয়াশার ভতের দয়িইে বরে হয়। বহুতল ভবনগুলো কুয়াশার আড়ালে ঢাকা পড়।ে রাস্তার পাশে বজিলি বাতগিুলো মটিমিটিি করে জ্বলতে থাক।ে শীতরে সকালে শহররে রাস্তাঘাট থাকে ফাঁকা। গাড়গিুলো হডেলাইট জ্বালয়িে চলাচল কর।ে ঘন কুয়াশার কারণে চলাচলে বঘ্নি সৃষ্টি হয়, র্দুঘটনার মাত্রা বড়েে যায়। শহুরে মানুষরে গায়ে শীতরে নানা রকমরে পোশাক দখো যায়। গরম কাপড়রে অভাবে বস্তবিাসী লোকরো শীতে খুব কষ্ট পায়। শীতরে রাতে শহরে ব্যাটমন্টিন খলোর হড়িকি পড়ে যায়। অনকেকে অবধৈ র্পাশ্বসংযোগ নয়িে বজিলি বাতি জ্বালয়িে গভীর রাত র্পযন্ত ব্যাটমন্টিন খলেতে দখো যায়।
অতথিি পাখি শীতরে অন্যতম আর্কষণ। শীতকালে পৃথবিীর বভিন্নি দশেরে পাখি আমাদরে দশেে আস।ে যদওি নধিনকারীদরে অত্যাচারে পাখি আগমনরে সংখ্যা কমে গছে।ে র্পযটন খাত থকেে শীতকালে প্রচুর বদৈশেকি মুদ্রা আস।ে এ সময় বদিশেি র্পযটকদরে আগমন বড়েে যায়। শীতরে অনুকূল আবহাওয়া দশে-িবদিশেি ভ্রমণবলিাসীদরে কাছে আরামদায়ক। শীতকালে দশেরে পকিনকি স্পটগুলো ভোজনরসকি ও ভ্রমণপপিাসুদরে পদচারণায় মুখর হয়। বাসাবাড়,ি হাটবাজার, উন্মুক্ত প্রান্তর র্সবত্র পকিনকিরে আয়োজন বড়েে যায়।
শীতকালে বাংলাদশেরে র্সবত্র নানা রকমরে পঠিাপুলি তরৈি হয়। গ্রামে গ্রামে চলে রঙ-বরেঙরে পঠিা, পায়সে, ফরিনি খাওয়ার আয়োজন। শীতরে নরম রোদরে আঁচে খোলা আকাশরে নচিে মাছরে সুরুয়া দয়িে পঠিা খতেে ভারি মজার। পঠিার জন্য আতপ চাল গুঁড়ো করতে হয়। কোনো পঠিা ভাপে হয়, কোনো পঠিা তলেে ভাজতে হয়। আমাদরে দশেে প্রায় সারা বছরই পঠিা খাওয়ার প্রচলন আছ।ে তবে শীতকালে বশিষে করে ভাপাপঠিা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাপাপঠিা দখেে জভিে পানি এসে যায়। আতপ চালরে গুঁড়ো, গুড় ও নারকলে সহযোগে তরৈি করা হয় ভাপাপঠিা। রসরে সঙ্গে দুধ মশিয়িে বানানো হয় রসরে পঠিা। এছাড়া চতিই, দুধচতিই, বড়াপঠিা, পাটসিাপটা, দুধপুল,ি ক্ষীরপুল,ি চন্দ্রপুলি প্রভৃতি পঠিার বশে প্রচলন রয়ছে।ে ছলেবেুড়ো সবাই এসব পঠিা খতেে ভালোবাস।ে
তীব্র শীত মানুষরে জীবনে র্দুযোগ নাময়িে আন।ে বশিষে করে মধ্যবত্তি ও নম্নিবত্তিদরে জন্য শীত হয়ে উঠে অসহনীয় এক ঋতু। উচ্চবত্তিরা প্রচ- শীতওে কষ্ট পায় না। কারণ প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র ক্রয় করার সার্মথ্য তাদরে থাক।ে কন্তিু প্রচ- শীতে মধ্যবত্তি ও নম্নিবত্তিরা প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র কনিতে না পারার কারণে প্রচুর কষ্ট ভোগ করে যা তাদরে কাছে র্দুযোগরে সামলি। এছাড়া গ্রনিহাউজ এফক্টেরে কারণে প্রতবিছরই প্রকৃততিে এর প্রভাব পড়ছ।ে যমেন- গ্রীষ্মে গরমরে তীব্রতা বাড়ছ।ে র্বষায় অতবিৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি বড়েে গছে।ে শীতওে শীতরে তীব্রতা বড়েছে।ে
শীতরে সকাল বাঙালি জাতরি জীবনকে করছেে বচৈত্র্যিময়। শীত আমাদরে জীবনে আর্শীবাদ এবং অভশিাপ দুইই বয়ে আন।ে শীতরে অভশিাপ থকেে শীর্তাত জনগণকে রক্ষা করার দায়ত্বি সরকাররে সবচয়েে বশে।ি সামাজকি, র্ধমীয়, শক্ষিাপ্রতষ্ঠিান, এনজওি, ক্লাব, মানবকি সংগঠন এবং সমাজরে বত্তিবানসহ নজি উদ্যোগে সবাইকে এগয়িে আসতে হবে শীতপীড়তি অসহায় জনগোষ্ঠীর পাশ।ে অভাবী জনগণরে শীতবস্ত্ররে অভাব মোচনে দল মত নর্বিশিষেে সবাইকে স্বতঃর্স্ফূতভাবে এগয়িে আসা উচতি।

সর্তীথ রহমান: শক্ষিক ও কলাম লখেক

আরো কিছু পোস্টঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *