রোহিঙ্গা শিশুর চোখের পানি মুছবে কে?

এস এম ফয়েজঃঃ

উখিয়ায় শরণার্থী ক্যাম্পের পাশের পাহাড়ের গাছতলায় বসে কাঁদছে ১০ বছরের এক রোহিঙ্গা শিশু, যার নাম আশরাফ। চুপচাপ কারো সঙ্গে কথা বলছে না। শুধু কাঁদছে। হঠাৎ চোখ পড়ল তার দিকে। প্রথমে মনে করেছিলাম, পরিবারের সবার সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু আমার সে ধারণাটা ছিল ভুল। পরে আশরাফের কাছে গিয়ে বসে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কান্না করছ কেন? কিছুই বলে না সে। জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার বাবা, মামা, ভাই-বোন কোথায়? তাও কথা বলে না। পরে আরেক রোহিঙ্গা নারীকে বললাম, একি আপনার ছেলে? তিনি বললেন, না। বললাম, চেনেন তাকে। মহিলাটি বললেন, জীবন বাঁচাতে আমি আমার সন্তানকে নিয়ে ছয় দিনে অনেক কষ্টে বাংলাদেশে আসি। এ ছেলেটিও আমার সঙ্গে সঙ্গে হেঁটে আসে। আমি বললাম, তার বাবা-মা কোথায়? বললেন, জানি না।

একটু কৌতূহল জাগল জানার। তারপর ছেলেটার গায়ে হাত দিয়ে বললাম, কী হয়েছে তোমার, কাঁদছ কেন? তোমার কি ক্ষুধা লেগেছে? ছেলেটি বলল, গত ছয় দিন কোনো কিছু খাইনি। খুব খিদা লেগেছে। পরে তাকে বিস্কুট ও পানি দিই। খাওয়া শেষে আবার বললাম, তোমার বাবা-মা, ভাই-বোন কোথায়? তখন কান্না কণ্ঠে বলতে লাগল জীবনের করুণ ইতিহাস। শিশু আশরাফ বর্ণনা দিতে লাগল বিভীষিকা ঘটনার। বলে, মিয়ানমারের সেনারা চোখের সামনে আমার মা ও বোনকে ধর্ষণ করে গলা কেটে হত্যা করে। মা আর বোনের নিথর দেহ পড়ে আছে মেঝেতে।

আমার বাবার হাত-পা বেঁধে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে সেনারা। আর ছোট ভাইটাকে দুই টুকরো করে ফেলে এ কোপে। রক্ত এসে তখন আমার গায়ে পড়ে। এ সময় আমি চিৎকার দিই বাঁচাও বাঁচাও বলে। তখন সেনারা আমার মুখ চেপে ধরে। অনেক কাকতি-মিনতি করে কোনোরকমে জীবন বাঁচাই। কিছুদূর আসার পর দেখি ,অনেক মানুষ দৌড়াচ্ছে। তাদের সঙ্গে আমি এখানে আসি। তার কথা শোনার পর নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। ঘুমাতে পারেনি কয়েক দিন। বার বার মনে পড়েছে শিশুটির কথা।

এখনো মনে পড়ে। মানুষ মানুষকে এভাবে হত্যা করতে পারে, তা জানা ছিল না। ১০ বছরের শিশু আশরাফের বণনায় তা জানলাম। মানুষ কতটা খারাপ হতে পারে, কতটা নরপিশাচ হতে পারে…কতটা পশু হতে পারে…?

লেখক : সাংবাদিক, বাংলাভিশন।

আরো কিছু পোস্টঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *